২৪০/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ২৫, ২০১৫

আলোকচিত্রায়ন বস্তুর চিত্রায়ন নাকি বস্তুর উপর আলোকচিত্রীর চিন্তার পরিবেশন?

আমি মনে করি আলোকচিত্রায়ন মূলত বস্তুর উপর আলোকচিত্রীর চিন্তার পরিবেশন। এর দ্বারা বস্তুর চিত্রায়ন যদিওবা ঘটে কিন্তু তা পুরোপুরিই আলোকচিত্রীর নিজস্ব দেখার ভাষা অনুযায়ী।

আমার এইরুপ দৃষ্টিভঙ্গির কারন ব্যাখ্যা করার আগে এই আলোচনার মূল উপাদান গুলো আমার কাছে কি অর্থ বহন করে তা ব্যাখ্যা করা জরুরি বলে মনে করি। আলোকচিত্র একটি শিল্প এবং যে কোন শিল্প কোন সার্বজনিন বিষয় না। শিল্পমাত্রই শিল্পী কোন বস্তুকে, কোন বিষয়কে বা কোন অনুভুতিকে কিভাবে দেখেন তার একটি প্রতিফলন। আলোকচিত্রও এর ব্যাতিক্রম নয়।

কোন কিছুকে দেখা দর্শকের নিজস্ব বিষয়। তেমনি দেখার বিষয় বস্তু কি হবে তা নির্ভর করে দর্শকের শিক্ষা, অবস্থান আর মননের উপর। এই দেখাকে যখন ক্যামেরা সাহায্যে একটি স্থায়ী রুপ দানের চেষ্টা করা হয় তখন তা হয় আলোকচিত্র। যেহেতু আলোকচিত্র সৃষ্টির মূলে রয়েছে আলোকচিত্রির দৃষ্টিভঙ্গি সেহেতু আলোকচিত্রটিও বস্তুটি আলোকচিত্রির মনে যে ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করে তার বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

একটি উদাহরনের অবতারনা ব্যাপারটিকে আরো ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। ১৯৮৯ সালের ৫ই জুন, বেইজিং এর তিয়ানানমেন স্কয়ারে যখন প্রতিবাদী আন্দোলন চলছিল ঠিক তখন আন্দোলনকারিদের দমনের জন্য আনা ট্যাংক গুলোর সামনে এসে দাড়ায় এক নাম না জানা বিপ্লবি। অস্ত্র নয় বরং নিজেকে দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন তিনি ট্যাংক গুলোর সামনে। ঘটনাটি যেখানে ঘটে তার ঠিক সামনেই বেইজিং হোটেলে তখন বিশ্বের নাম করা সব সংস্থার ফটো সাংবাদিকরা অবস্থান করছিলেন। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই আলোকচিত্রিরা ক্যামেরা বন্দি করেন এই অসাধারন ঘটনাটি।

জেফ ওয়াইডনার (এপি)

স্টুয়ার্ট ফ্র্যাংকলিন (ম্যাগনাম)

চার্লি কোল (নিউজউইক)

উপরের ছবিগুলোর দিকে তাকালে বুঝতে পারা যায় আলোকচিত্রিগন একই জায়গায় থাকলেও ঘটনাটির ক্ষেত্রে তাদের দেখার দৃষ্টি ছিল ভিন্ন ভিন্ন। প্রথমটিতে জেফ ওয়াইডনার তার ছবিতে স্ট্রিট লাইটের একটা অংশ রেখে শহর, বিপ্লবি এবং রাজপথের মধ্যে একটি সম্পর্ক দেখাতে চেয়েছেন। দ্বিতীয় ছবিতে স্টুয়ার্ট ফ্র্যাংকলিন আরো ওয়াইড এংগেলে গিয়ে ছবিতে যোগ করেছেন আরো কিছু উপাদান যেমন একটি পোড়া বাস, বাইরে থেকে আরো একটি ট্যাংকের আগ্রাসন, ফাকা রাজপথ। চার্লি কোল, যিনি পরবর্তিতে এই ছবির জন্য ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো পুরস্কার পান, তার ছবি তে সরাসরি চলে গিয়েছেন ঘটনার কেন্দ্র বিন্দুতে। তার কাছে একজন নির্ভিক বিপ্লবির প্রতিবাদটাই ছিল মূখ্য। ঘটনার একদম কেন্দ্রে দর্শককে নিয়ে গিয়ে তিনি তুলে এনেছেন সেই নামহীন বিপ্লবির সাহস আর যুদ্ধবিরোধি চেতনাকে।

সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি, আলোকচিত্রি পরিবর্তনের সাথে সাথে আলোকচিত্রও বদলে যায়। ফলে আলোকচিত্র শুধু মাত্র কোন বস্তুর চিত্রায়ন এর মধ্যে আর সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং তা হয়ে ওঠে বস্তুর উপর আলোকচিত্রির অভিজ্ঞতা আর অনুভুতির প্রতিফলন। আলোকচিত্র তখন শুধু তখন শুধুই একটি আলোকচিত্র নয়, তা তখন আলোকচিত্রির মনের ভাব প্রকাশের একটি মাধ্যম, আলোকচিত্রির ভাষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *