২২৯/৩৬৫

লেখার তারিখঃ অক্টোবর ১৫, ২০১৫

বুক রিভিউঃ আহমেদ ছফা’র ওঙ্কার The Om

আহমেদ ছফার ওঙ্কার The Om পড়ার পর পর ই এর রিভিউ লেখা সম্ভব হয় নি। কারণ সম্মোহন তখনো কাটেনি। বই পড়ে পাওয়া অনুভুতি টা তখনও পিয়ানোর তার এর মত কাপছিল বুকের ভেতর। এই অনুভুতিকে সংজ্ঞায়িত করা আমার মত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নাচিজ এর পক্ষে অনেক কঠিন ব্যাপার। এটাকে ঠিক দুঃখ বলা যাবে না আবার খুশিও বলা যাবে না। অনেক টা প্রিয় গান টা শেষ হবার পর যেমন আবার বাজাবো কি বাজাবো না অনুভুতি টা হয়, এটা ঠিক সে রকম। ভাল লাগা টা ধরে রাখতে ইচ্ছা হয়।

ওঙ্কার এর পটভূমি ১৯৬৯ এর গনঅভ্যূত্থান এর পূর্ব্বর্তী এবং মধ্যবর্তি সময় টা। আইয়ুব খান এর শাসন কালে এই দেশ এর রাজনৈতিক অবস্থার যেমন সময় এর সাথে পরিবর্তন হচ্ছিল তেমনি পরিবর্তন আসছিল একটা খুব সাধারন সনাতন বাঙ্গালির জীবনেও। এই উপন্যাস এ তার চোখ দিয়েই আমরা দেখতে পাই তার বাবার উত্থান এবং পতন, তার বড় হয়ে ওঠা, বিয়ে করা, শশুরের অনুগ্রহে বেচে থাকা যেখানে সাচ্ছল্য হয়তো ছিল কিন্তু সস্তি ছিল না। পড়তে পড়তে এই কেন্দ্রিয় চরিত্র যার কোন নাম লেখক দেন নি, তার সাথে নিজের একটা মিল খুজে পাই। মনে হয়, আমিও তো এমন কাপুরুষ ই। ঝামেলা দেখলে মনে মনে দৌড়ে পালাই। এক্টা সফল উপন্যাস এর এইটাও একটা বৈশিষ্ট্য বলে মনে করি। নিজের সাথে একটা চরিত্র এর মিল খুজে পাওয়া। আর সেটা যদি হয় কেন্দ্রীয় চরিত্র, তাহলে সেই উপন্যাস হয় কালজয়ী।

আমি প্রান পণে চেষ্টা করছি, রিভিউ লিখতে গিয়া যেন , কাহিনীর সব কিছু বলেই না দেই। কিন্তু খুব বেশি সফল হতে পারছি না বোধহয়। উপন্যাস টা শেষ হয় একটা মৃত্যু দিয়ে আর যে মারা যায় তার উচ্চারিত প্রথম এবং শেষ শব্দ ছিল “বাঙলা”। জাতীয় এক টা আন্দোলন যে সাধারন মানুষের মনো জগতে কত টা প্রভাব ফেলতে পারে তা এই উপন্যাস পড়লে বোঝা যায়। এখানে মেরুদন্ডহীন বাঙালি ও মিছিল দেখে ভাবতে বাধ্য হয়, এই জনস্রোতে মিশে যাওয়া উচিত, মিশে যেতে হয়। বাকশক্তিহীন মেয়েটিরও মনে হয় তারো যে স্লোগান দেয়া বাকি।

আহমেদ ছফার উপন্যাস এ সবচেয়ে যে জিনিষ টা ভাল লাগে তা হলো সংলাপ এর প্রতি জোর না দিয়ে শুধু শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে যা ঘটছে তার সাথে পাঠক কে একাত্ব করে ফেলার ক্ষমতা। এই উপন্যাস এর অনেক জায়গা আছে যেখানে রসিকতা আছে কিন্তু সেটা সংলাপের বাহুল্যে জর্জরিত নয়। এই যুগের সাহিত্য হলে যা প্রায় অসম্ভব ছিল। পুরো উপন্যাস এর কোথাও নায়ক এবং নায়িকার কোন নাম নেই। তবু তাদের মধ্যে যে কেমিস্ট্রি তা অনুভব করতে এক্টুও কষ্ট হয় না। নায়ক যখন নায়িকা অবহেলা করে কিংবা কোন কোন রাতে লেখকের ভাষায় দুঃখী মেয়েটা “সারারাত একতাল কাদার মতো আমার শরীরের সঙ্গে লেগে রইল” হয়ে থাকে তখন বুকের ভেতর কেমন একটা হুহু শব্দ শুনতে পাই।

এই কাদা মাটির আস্তে আস্তে অর্থহীন বিপ্লবি স্থাপত্য হয়ে যাওয়া এবং তারপর নিজের অক্ষমতার আস্ফালনে গলে যেতে যেতে রক্ত হয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে এই উপন্যাস শেষ হয়।

অনেক ছোট কলেবর এর একটা উপন্যাস। মাত্র ৫৯ পৃষ্ঠা। যারা আহমেদ ছফা পড়া শুরু করবেন ভাবছেন তাদের জন্য খুবি ভাল একটা স্টারটিং পয়েন্ট হতে পারে এই উপন্যাস।

আপাতত পড়ছি অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় এর “নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে”। এরপর আবার ফেরত আসব আহমেদ ছফা য়। “একজন আলি কেনানের উত্থান পতল” উপন্যাস এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *