লেখার তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৫ | ১১.২৮ পি এম
আমার বাবা ঘুমায় গেসে। সারাদিন উনার উপর দিয়া কম ধকল যায় নাই। গরু কাটাকাটির জন্য লোক ম্যানেজ করা থেইকা শুরু কইরা ডিস্ট্রিবিউশন। সব নিজের হাতে করসেন। ছেলে হিসাবে আমি একদম ই অপদার্থ লেভেল এর। বাসায় একি জায়গায় শুইয়া ছয়টা বন্ড মুভি দেখা ছাড়া কিছুই করি নাই। আম্মাকে কয়েকবার পাঠাইসিল অবশ্য। সামনে আইসা কি কি জানি বইলা গেসে। হেডফোন এর পিছনে লুকায়া থাকার কারনে তার কিছুই শুনতে হয় নাই। তবু কারো কোন অভিযোগ নাই। থাক ঈদ তো।
আম্মাও টিভি টা বন্ধ কইরা রান্না ঘরে কি জানি খুটুর খাটূর করে। দোকান বন্ধের আগে দোকানদার এর হিসাব মিলানোর মত। আমি এক মগ আইস টি নিয়া বসছি। লাইট নিভায় দিসি। অফিসের দেওয়া নতুন ল্যাপ্টপ এর ব্যাক্লিট কি বোর্ড এর অক্ষর গুলা অন্ধকার এও জল জল করে জানান দিচ্ছে, ইথার, তুমি কিন্তু অনেকের চেয়ে ভাল আছো। ঈদ এর এই পার্ট টা আমার খুব ভাল্লাগে। এই শেষ এর পার্ট টা। এই উৎসব এর পরের নিশ্চুপ অংশ টা। সব কাজ শেষ। এখনি ঘুমায় যাবে মানুষ গুলা। একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফালাবে , যাক যা গেসে ভালই গেসে, আরো ভাল হয়তো যাইতে পারতো। এই সব ভাবতে ভাবতে ঘুমায় যাবে এক জন এক জন। কালকে যা হয় হোক। আজকে তো আর কিছু নাই।
আমি আহমেদ ছফার উপন্যাস সমগ্র টা পড়া শুরু করসি গতকাল। প্রথম উপন্যাস টার নাম “সুর্য তুমি সাথী”। প্রথম দুই টা চ্যাপ্টার পরসি মাত্র। আহমেদ ছফার লেখা উপন্যাস পড়তেসি এই প্রথম। এর আগে শুধু “যদ্যপি আমার গুরু” পড়সিলাম। প্রথম দুই চ্যাপ্টার পইড়াই বই এর রিভিউ মার্কা কথা বার্তা লেখা টা অতিরিক্ত বেয়াদপি হয়া যাবে। তাই ওইদিকে গেলাম না। শুধু পড়তে পড়তে একটা জিনিষ মনে হইসে সেইটা নিয়া কথা বলি একটু।
আমার কাছে মনে হইসে আহমেদ ছফা অনেক সময় নিয়া অনেক শব্দ খরচ কইরা ঘটনার পরিবেশ তৈরি করেন। সংলাপ এইখানে কিছু কিছু যায়গায় মুখ্য বিষয় না। পরিবেশ এর অন্যন্য উপাদান গুলা যেমন দারুন খরায় মাঠ ঘাট পুইড়া যাইতাসে, হাসেম এর বই হাসেম এর মাথার পট্টি পালটে দিল যদিও কিছুক্ষন আগেও হাসেম মাইর দিসে বউ রে, এগুলা অনেক হেল্প করতাসে টু ফিল দা স্টোরি, টু সি দা স্টোরি।
সংলাপ গুলা চট্টগ্রাম এর আঞ্চলিক ভাষায় লেখা আবার ব্রেকেটে অর্থ ও বলে দিসেন লেখক। পরিবেশ তৈরি করার এই ব্যাপারটা এখনকার লেখক দের মধ্যে অনেক কম দেখা যায়। সবাই ঠুশ ঠাশ সংলাপ এ চইলা আসে। হিউমার এ চইলা আসে। সময় নিয়া অনেক গুলা প্যারাগ্রাফ খরচ কইরা পরিবেশ টার ফিল তৈরি করার পর চরিত্র গুলাকে দিয়া সংলাপ বলানোর সাহস এখনকার অনেক লেখক এর নাই। এর কারন মনে হয় তারা মনে করেন পাঠক এর এত সময় কই। তারা চায় বিনোদন। তারা চায় তাদের ইমোশন এ সরাসরি হাত দেক লেখক। বুকে হু হু তুলে দেক, হাসায়া দাত বাইর কইরা দেক, প্রেম প্রেম লাগায়া ব্যাকগ্রাউন্ড এ Awwww আওয়াজ উঠাক আর চোখ ছোট ছোট কইরা দেক আহ্লাদে। স্লো গোয়িং উপন্যাস বইলা কিছু খুইজা পাওয়া দুর্লভ এখন।
“সূর্য তুমি সাথী” উপন্যাস এর ২য় অধ্যায় এ আসা হাসিম এর দাদি কে আমার খুব পছন্দ হইসে। পাড়ার লোক এর ভয়ে উনি রাতের আধারে আহত হাসিম কে দেখতে আসেন। অনেক কিউট দাদি। তার কথা লিখতে গিয়া আহমেদ ছফা লিখসেন,
“ আঁধারের ভেতর নদীর মতো – শুশ্রুষার জল, পিপাসার বারি হয়ে আসে বুড়ি – আধারেই চলে যায়। দিনের আলো তে দেখা নেই। অন্তরেও আঁধার নদী আছে। তারই স্রোতে ভেসে ভেসে আসে সমাজের অনুশাসন ডিঙ্গিয়ে রাতের বেলা নাতিকে দেখার জন্য। হৃদয়ের এই লাবণ্যরেখার নদী কোনদিন কি দিনের আলোর মুখ দেখবে ?”
এভাবে কেউ ভাবে না এখন । জীবন এর চেয়ে অনেক গতিময়। যত বড় হচ্ছি, জীবন এর যে জিনিষ টা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করছি তা হচ্ছে এর গতি। সব কাজ আজকেই করতে হবে, সব ইচ্ছা আজকেই পুরন হতে হবে, সব ভালবাসা আজকেই লাগবে। এত তারাহুরা ক্যান আমাদের। কি হবে এত তারাহুরা করলে। যেখানে সে পাচ মিনিট আগে পৌছাবে আমি সেখানে দশ মিনিট পরে পৌছাবো। বিগ ডিল। বলা হয়, দৌড়াতে না পারলে পিছিয়ে পরতে হবে। কেউ বলে না , দেখতে দেখতে যাই, জার্নি টাই তো ইজ অল দ্যাট উই হ্যাভ। জার্নি টাই তো উইল ডিফাইন হু ইউ আর। নাইলে গন্তব্যে তো পৌছাবেই সবাই। জীবন ই তো নিয়া যাবে গন্তব্যে।
আমি জীবন এইটা ভাবতে ভাবতে শেষ করতে চাই না যে, আহা কিছুই করে যেতে পারলাম না, সময় ই পাইলাম না। আমি ভাবতে ভাবতে যেতে চাই, ওয়াও, ভাগ্যিস দৌড়াইনাই, নাইলে তো এই গুলা মিস করতাম। ভাবতে চাই কত বই এখনো পড়া বাকি। কত বিশ্ময় এখনো আমার অপেক্ষায়। এই ছোট জীবন কে ছোট ভাবতেই ভাবতেই আরো ছোট করে ফেলতে চাই না আমি। দিন শেষে সারভাইভ করতে চাই না। দুপুর বেলা পর্যন্ত আয়ু হলেও দেখে শুনে পড়ে অনুভব করতে করতে বাচতে চাই। পিঠে পড়তে থাকুক চাবুক সপাং সপাং। এই গাধার কোন তারাহুরা নাই।