লেখার তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৫ । ১০.৫৭ পি এম
আজকে ঢাকা চইলা আসছি। বেশিক্ষণ লাগে নাই আস্তে। ময়মনসিং এর রাস্তা অনেক ভাল করসে এখন। বড় করসে। মাঝখানে ডিভাইডার , দুই পাশে বাউন্ডারি পিলার দিসে। বৃষ্টির মধ্যে সাই সাঁই কইরা আসতে আসতে ভাবতাসিলাম, আহা আমরা কত অল্প পাইলেই খুশি হই। এইরকম থাকাটাই স্বাভাবিক ছিল, অথচ এই রকম দেইখা মনে হইতাসে কত উন্নয়ন হইসে। এই টা মনে হয় ইংরেজ সূত্রে প্রাপ্ত এই উপমহাদেশ এর রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি ই। আমাদের এমন কইরা রাখা হইব যাতে আমাদের মনে হইব আমরা গরীব। আমাদের সমস্যার শেষ নাই। আমাদের অনেক অভাব। তারপর আমাদের যা দিব মনে হইব কত্ত কিছু পাইসি আর যে দিব তারে মনে হইব সেই তো আসল গড।
একটা নতুন জিনিশ খেয়াল করলাম রাস্তায় আস্তে আস্তে। বাজার বা লোকালয় এলাকা গুলা দিয়া যখন হাইওয়ে পাস করসে তখন রাস্তার পিচ চেঞ্জ হয়া গেসে। এস্ফল্ট এর বদলে কংক্রিট ঢালাই দিয়া খাবরা খাবরা কইরা রাখা হইসে। যার উপর দিয়ে গাড়ি জুরে যাইতে বাধা পায়, ঘটর ঘটর আওয়াজ হয়। তাই গতি কমাইতেই হয়। ভালা লাগসে বুদ্ধি ডা।
ময়মনসিং এর এক দিন এর ট্যুর টা ভালাই লাগসে। মিটিং ওয়াজ প্রিটি গুড। আমি যেহেতু আমার বস এর হয়া গেসি তাই ডর ডর লাগতাসিল ইট্টটু। কি না কি মেস আপ করি। পরে ঢাকা আয়া বকা খামু। কিন্তু কিছু স্ক্রু আপ করি নাই। যা যা জিগাইসে ভালা মত উত্তর দিতে পারসি, প্রেজেন্টেশন দিতে পারসি ঠিক ঠাক মত। রিজিয়ন এর হেড আমাদের যাওয়া উপলক্ষে ব্যাপক খানা দানার ব্যবস্থা করসিল। খাইয়া দায়া এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটির ভিতর গাড়ি দিয়া একটা ঘুরান দিয়া রওনা দিয়া দিসি ঢাকার দিকে।
মাঝখানে তন্ময় নামে একজন ফেসবুক বন্ধু আসছিল আমার সাথে দেখা করতে। উনি চাও খাওয়াইসে। মজা লাগসে ব্যাপার টা। আমি কত তুচ্ছাতিতুচ্ছ একটা বিন্দু, আমারে সাথে দেখা করতে চইলা আসছে দ্যাখা করতে। পরে মনরে একটা ধমক দিয়া চুপ করাইলাম যে ফেসবুক এর জন্ম শুধু নিজেরে বিক্রি করার জন্য তৈরি হয় নাই। ফেসবুক এর মুল উদ্দেশ্যই ছিল কিন্তু একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষ এর কানেক্ট হওয়ার একটা ক্ষেত্র তৈরি করা। এই খানে আমরা ক্রমাগত নিজেরে আসল দুনিয়া থেইকা ডিস্কানেক্ট কইরা খুব কানেক্টেড ফিল নিয়া ঘুইরা বেরাইতাসি। ভুইলা যাইতাসি , মানুষ যত দেখি, মানুষ তত হই।
গতকাল সন্ধ্যায়ও দুইজন আসছিল দেখা করতে। আমি ময়মন্সিং এর হোটেলে পৌঁছাইয়া খালি রুম এ ব্যাগ টা রাইখাই বাইর হয়া গেসিলাম হাটতে। হোটেলের নিচেই একটা বাজার। নাম “মাইচ্ছা বাজার” যদি মাছ এর চেয়ে চাউলের দুকান বেশি লাগসে। এইটার নাম পালটাইয়া “চাউল্লা বাজার” রাখা উচিত।
আমি নাইমা বাজারের গলিতে ঢুইকা এই গলি ওই গলি করতে করতে ইচ্ছা কইরা হারায় গেলাম। একটা অচেনা শহরে হারায় যাইতে যে কি মজা। ভাল লাগাইতে টুরিস্ট স্পট এই যাইতে হইব এমন কোন কথা নাই। আশে পাশেই কত গল্প দেখলাম। আমি যখন হাট্টতাসিলাম তখন সন্ধ্যা। অনেক দোকানে ধুপ দেওয়া হইসে। ধুপ এর গন্ধে পুরা গলি কেমন মাদকতা ময় হয়া আসে। ধুপ এর গন্ধ টা এত ভাল্লাগে। কোথায় জানি উলু দিতেসিল মহিলারা। আমি আওয়াজ লক্ষ্য কইরা হাঁটলাম অনেকক্ষণ , মন্দির পাইলাম না।
একটা ছোট চায়ের দোকান দেখতে অনেক ভাল্লাগ্লো। নাম সুনীল টি স্টল। একজন ই মাত্র চালায় দোকান টা। তার আবার খুব রাশ আওয়ার যাইতাসে। আমি গিয়া দাঁড়াইতে উনি বলল, দাদা একটু দারাইনযে, আইতাসি। বইলা উনিই চা নিয়া কই জানি দিয়া আস্তে গেল। ফিরা আইসা আমারে চা বানায় দিল। অনেক মজার চা। আর পরিবেশনা টাও অন্যরকম। ছোট ছোট কাচ এর গ্লাস। আমাকে একটা গ্লাস এর উপর আরেকটা গ্লাস বসায় ওইটা তে চা ঢাইলা দিল খাইতে । আমি ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্স দেইখা অবাক হয়া গেলাম লোকটার। উপরের গ্লাস টা আসলে ফর দা গ্রিপ আর ফর বেটার প্রটেকশন ফ্রম দা হট টি। নাইসসস।
এমন সময় ছেলে দুইটা ফোন দিল যে ওরা হোটেলের নিচে আসছে। ওদের বললাম একটু দাঁড়াইতে। তারপর এরে ওরে জিজ্ঞেস কইরা হোটেল এর দিকে হাটা ধরলাম।
ফেরার সময় ঠিক আমার সামনে একটা ফলের দোকান থেইকা একটা আপেল মাটিতে পইরা গেল আর ভীর এর পা এর ধাক্কা খাইয়া সামনের দিকে গড়ায়া চইলা গেল। এই খানে নিউটন চাচা থাকলে শিউর উচ্চাকারশন শক্তি (মধ্যাকর্শন তো আবিষ্কার করা শেষ) নিয়া এক খানা “হাই উঠানি ঘুম পারানি” থেউরি আবিষ্কার কইরা ফালাইত। । কিন্তু আমাগো ফল ওয়ালা ইজ নোট ইন্টারেস্টেড ইন সাচ স্টুপিড স্টাফ।
ফল ওয়ালা সাথে সাথে “আপেল গেলগা আপেল গেলগা” বইলা চিল্লাইতে চিল্লাইতে আপেল এর পিছে দৌড় দিল। আপেল কি আর থামে। পায়ের ধাক্কা খাইয়া সামনে কই কই গেল গা।আপেল ওলা রে দেইখা মনে হইতাসিল একটা সন্যের আপেল হারায়া লাইসে।
হোটেলের নিচে আইসা সেই দুইজন এর সাথে দেখা হইল। কিন্তু সেই গল্প আরেকদিন বলব নে। ঘুম আস্তাসে বেশি। পরে কি লিখতে কি লিখুম।