১৭২/৩৬৫

লেখার তারিখঃ আগস্ট ১৮, ২০১৫ । ৯.১৭ পি এম

 

বাংলাদেশ যে স্বনির্ভর হইতাসে আস্তে আস্তে তা বুঝতে হইলে খুব বেশি দূর যাইতে হয় না। আমাদের লিফট গুলাই তার বড় প্রমান। ছোটবেলায় আমরা দেখতাম সব লিফট এর সাথে একজন লিফট ম্যান থাকে। যে খুব গম্ভীর মুখে ভুরু মুরু কুঁচকায় বইসা থাকতো। আর লিফট এ যারা উঠতো তাদের জিজ্ঞেস করত “কত তে যাবেন?”

নতুন নতুন ঢাকায় আসা কেউ কেউ এইটারে ভাবতো লিফট এ উঠলে মনে হয় টেকা টুকা দেওয়া লাগে, তারা আবার উলটা জিগায়া ফালাইলতো, “কত নিবেন আপনেই কন” পরে পাসের জন এর গুঁতা খাইয়া তারাতারি স্মার্ট হওনের ট্রাই করত আর বলতো, “সাত এ দেন, রহমান স্যার এর অফিসে যাব, উনি আমার তালই আব্বা লাগেন” আর লিফটম্যান মাথা নাড়াইয়া সাত লেখা চারকোনা বাটন এ টিপ দিত।

লিফট এ উঠা লোকজন এর লিফট এর উঠার পর মনে থাকতো না তারা জানি কত তে উঠার জন্য উঠসে। পুরা লিফট এর সব লোক হা কইরা লিফট এর কপালে লেখা সংখ্যায় গুলার দিকে তাকায় থাকতো যেইখানে স্কেলের মত সব সংখ্যা লেখা থাকতো আর একটা একটা কইরা জলতো আর নিভতো। সেই অপুর্ব সংখ্যার জলা নিভা তাদের এতই সম্মোহিত কইরা রাখতো যে লিফটম্যান এর বলতে হইত, সাত এ আসছি, নামেন নামেন। আর সবাই হুর মুর কইরা নাইমা যাইত, কারন লিফট এর দরজায় বাইর হইতে গিয়া আবার যদি কেঁচা লাগে।

লিফট গুলায় আর কিছু থাকুক না থাকুক একটা টুল থাকতো মাস্ট। যেইটা লিফট ম্যান এর সিংহাসন না হইলেও ইদুরাসন তো বটেই। সেইটা খালি থাকলেও কেউ বসার সাহস পাইত না। একবার এক লিফট এ খালি লিফট ম্যান নাই বইলা আমি আর আম্মা আট তালায় হাইটা উঠসিলাম।

আর এখন সব লিফট সেলফ সার্ভিস। উইঠাই যে যার নাম্বার এ টিপ মারে। আর নাম্বার গুলাও লিফট এর ভিতরে কপাল থেইকা সইরা আসছে সাইডে। লিফট এর ভিতর মিউজিক, ফ্যান, টেলিফোন ইত্যাদি নানান আধুনিক সুযোগ সুবিধা যোগ হইসে।

যদিও আমাদের কিছু কিছু স্বভাব এখনো বদলায় নাই। আমরা লিফট আস্তে দেরি করলে কল বাটনে হুদাই জুরে জুরে টিপ তে থাকি। এস ইফ, জুরে জুরে টিপলে কল বাটনে প্রেশার সেন্সর লাগানো আছে, সেইটা সেন্স কইরা আপনেরে তুইলা নেওয়ার জন্য জনাব লিফট বাংলা সিনামার নায়কের মত “জুলেখা আ আ আ” বইলা স্লো মোশন এ দৌড় দিয়া আসবে।

কেউ কেউ উপরে নিচে দুই বাটনেই টিপ মাইরা দাঁড়াইয়া থাকে। যাতে কোন মতেই মিস না হয়। সে হয় তো নিচে যাবে। কিন্তু টিপ মারসে দুইটা তেই। লিফট এর দরজা খুলার পর সবাই যখন প্রশ্নবোধক চোখে তার দিকে তাকায় থাকে তখন সে খুবি ভাব নিয়া বলে, ও উপরে যাচ্ছে? আচ্ছা যান। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় বলি, হে মহাত্মন, আপনার এই মুল্যবান অনুমুতির জন্য আপনার চরণে শতকুটি প্রণাম।

আবার কেউ কেউ আছে যাদের দেখলে মনে হয় এই লিফট আজকে রাতের শেষ ট্রেন, এইটা চইলা গেলে আর জীবনেও লিফট আসবে না । সে হয়তো তিন কিলোমিটার দূরে এমন সময় লিফট এর দরজা খুইলা গেল। সে ওই খান থেইকা “এই লিফট আসছে, লিফট আসছেএ এ এ, ধরেন ধরেন” বইলা দৌড়ানি শুরু করে আর লিফট এর কাছে আইসা দরজায় কেঁচা খাওয়ার ভয়ে কুংফু স্টাইলে বাতাসে একটা কোপ দ্যায় । লিফট এর সেন্সর তার বাতাসি কোপ খাইয়া দরজা লাগতে গিয়াও খুইলা যায়। আর সে বেশ , হু হু, দেখসো আমি কত কুতুব, ভাব নিয়া লিফট এ উঠে।

আমি এরকম লোক দেখলে লিফট এর দরজার ওপেন বাটন এ চাপ দিয়া দাড়ায় থাকি যাতে উনারা শান্তি মত উঠতে পারে। কেউ কেউ থ্যাংকিউ দ্যায় কেউ কেউ দ্যায় না।

সবচেয়ে মজা হয় সকাল বেলা অফিস্ যাওয়ার সময় যখন ১৫ তালা থেইকা নামি আর ১৪ তালায় আইসা এইরকম কারো জন্য লিফট আটকাই, আর সে আইসা মোটামুটি লিফট এর দরজা জরাইয়া ধইরা দাড়ায়া হাঁক ডাক শুরু করে,

“এই সুহেলের মা, তাড়া তাড়ি আসো, লিফট আসছে, লিফট আসছে। সুহেলের নাস্তা খাওয়া শেষ হইসে? ওরে নিয়া তাড়াতাড়ি আসো। লিফট আসছে, লিফট আসছে। আরে আসো না তাড়াতাড়ি। লিফট যাবে গিয়া তো। আরেকটা মুজা পরে পরাইও। স্কুল এর দেরি হয়া যাবে। লিফট আসছে, লিফট আসছে”

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *