১৬০/৩৬৫

লেখার তারিখঃ আগস্ট ০৬, ২০১৫ । ১১.২৮ পি এম

 

পাটি পাটি হা হা এর একটা মজা হইল হাটতে হাটতে অনেক গল্প দেখা যায় রাস্তায়। আজকে হাটা শুরু করতে হইসে একটু দেরি তে। ৯ টার দিকে। তার আগে ৭ টার দিকে অফিসের পর আমরা কয়েকজন ফারাহর বাসায় গেসিলাম। ওর একটা গুল্টু পিচ্চি হইসে ৩ মাস আগে। তারে দেখতে গেসিলাম। অনেক লক্ষ্মী পিচ্চি। সবার কোলে যায়। আমার কোলে বইসা ছিল অনেকক্ষণ। আমি ওরে কেমনে গরিলার মত বুকে কিল দিয়া আ আ আ আ বলতে হয় শিখানোর চেষ্টা করসি। মনে হয় শিখসে। কারণ কোন প্রশ্ন করে নাই।

ফারাহ হাল্কা নাস্তা খাওয়াইয়া আমার ভু.ক.ক কে হুমকির সম্মুখীন কইরা দিসে। ওর বাসা থেইকা ৯ টার দিকে বাইর হয়া ওর বাসার চারপাশেই সার্কিট মারা শুরু করসি। ভাগ্যিস ওরা কেউ বারান্দায় আসে নাই। নাইলে যদি দেখতও মেহমান বাসা থেইকা খাইয়া গিয়া বাসার চারপাশে চক্কর মারতাসে তাইলে নিজেদের খাওনে কিসু মিশানই আসিল কিনা তা লওয়া নিজেরাই টেনশন এ পইরা যাইত। যাউক ভালইসে। দেহে নাই।

আজকে হাটতে হাটতে দুই টা গল্প দেখসি। একটা হইল একটা পিচ্চি মেয়ে ক্লাস ওয়ান টু এ পরে মনে হয়, তার বাবা আর ও একটা গোলাপি সাইকেল নিয়া রাস্তায় বাইর হইসে। বাবা টা মেয়েটা কে সাইকেল চালানো শিখাইতাসিল। আর মেয়েটা অনেক খুশি আর অনেক লজ্জার সম্মিলিত এক্সপ্রেশন নিয়া সাইকেল এ একদম রাজকন্যার মত বইসা ছিল। বাবা টা বলতেসিল, “এই তো মা, হচ্ছে তো মা, পারবা তো মা”। আমি তো বসুন্ধরার সি ব্লক এর রাস্তা গুলায় গোল গোল ঘুরতে সিলাম, ওরাও ঘুরতেসিল । ওদের কে ২য় বার ক্রস করার সময় শুনি মেয়েটা বলতাসে, বাবা আমি একটু নিজে নিজে চালাই? আর বাবা টা বলসে, অবশ্যই মা, এটাই তো চাই।

তার পরের ঘটনা টা দেখসি আরেকটু পরে। রাস্তার ধারে ফুটপাথ, ফুটপাথের পারে একটা এপার্টমেন্ট। এপার্টমেন্ট এর নিচে অনেক ইশাটাইল কইরা বিল্ডিং এর নাম লেখা। সামনে আবার টাইলস লাগান যায়গা। আমি দূর থেইকা দেখলাম ওই খানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বইসা আসে। আরেকটু কাছে গিয়া দেখলাম ছেলেটা আর মেয়ে টা একটা ল্যাপটপ নিয়া বইসা আসে। ছেলেটা মেয়েটাকে কম্পিউটার শিখানোর চেষ্টা করতাসে। ছেলেটা বললো, বল এইটা কি। মেয়েটা বলল, “মাইক্রোসফট”। ছেলেটা বলল, “আরে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বল”। তারপর বলল, “বল এইটা কি?” মেয়ে টা বলল, “এইটাও মাইক্রোসফট”। ছেলেটা বলল, “আরে গাধী, সব ই তো মাইক্রোসফট, মাইক্রোসফট এক্সেল বল”। মেয়েটা বলল, “আরি বক ক্যান, অন করলে তো মাইক্রোসফট ই দেখায়। তারপর কি লেখা পড়তে পড়তেই যায় গা, আমি কি করুম”

পাটি পাটি হা হা এর গল্প লিখতে আর ইচ্ছা করতাসে না। ছেলেটা মেয়েটার সুখ চিন্তা কইরা মন খারাপ হইতাসে। আমি বিরাট হিংশুইট্যা হয়া গেসি ইদানীং। যাক গা একটা অন্য গল্প লিখি।

এক দেশে ছিল এক নাবিক। অনেক পুরানা জাহাজের ক্যাপ্টেন। সবাই অনেক সমীহ করে। একবার এক সমুদ্র যাত্রায় জাহাজ যখন সমুদ্রের মাঝখানে , এক সহকারী আইসা খবর দিল, ওস্তাদ, আমাদের দিকে তো একটা জলুদস্যু এর জাহাজ আস্তাসে। অখন কি অইবো?

ক্যাপ্টেন বলল, শুন পরাজয়ে ডরে না বীর। বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সুচাগ্র মেদিনী। আমার লাল শার্ট নিয়া আসো। হের হেল্পার যিগাইলো, উস্তাদ, লাল শার্ট কেরে? ক্যাপ্টেন বলল, যাতে জলদস্যু দের সাথে যুদ্ধের সময় আমি গুলি খাইয়া রক্ত বাইর হইলে কেউ বুঝতে না পারে আর ডি মোটিভেটেড না হয়। হেল্পার নাবিক তো শুইনা টাস্কই। আইসসালা কি বুদ্ধি।

এর কিছুদিন পর হেপ্লার রে দায়িত্ব দিয়া ক্যাপ্টেন গেসে ঘুমাইতে। এমন সময় হেল্পার এর হেল্পার আইসা খবর দিল, উস্তাদ আমাগো দিকে ৫০টা জলদস্যু জাহাজ আস্তাসে। হেপ্লার এর তো ভয়ে অজ্ঞ্যান হউনের দশা কিন্তু দেখলো এই তো সময়, উস্তাদ যা শিখাইসে সব উজাড় কইরা দেওনের। সে অনেক চিন্তা কইরা একটা চিৎকার দিল,

এই কে আছিস, আমার হলুদ প্যান্ট নিয়া আয়।

 

১৫৯/৩৬৫

লেখার তারিখঃ আগস্ট ০৫, ২০১৫ । ১১.৪৯ পি এম

 

আজকে মাসের পাঁচ তারিখ। এই পাঁচ দিনে আমি ২৫ কিলোমিটার হাটসি। আমার কাছে এইটা বিরাট একটা ব্যাপার। ২৫ কিলোমিটার মানে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেইকা সোনারগাঁও পর্যন্ত দূরত্ব। হাইটা গেলে ৫ দিনে সোনারগাঁও পৌছায় যাইতাম। ইশা খাঁ বাইচ্চা থাকলে আজকে কত খুশি হইতেন।

জিনিশ টা একটা নিজেকে দেওয়া নিজেরই চ্যালেঞ্জ। দেখি না পারি কিনা, পারবো না ক্যান। মাত্র পাঁচ কিলোমিটার ই তো প্রতিদিন। এই ভাবে হাটতে থাকলে ২০ তারিখ এ গিয়া ১০০ কিলো মিটার হবে। কি দারুণ ব্যাপার একটা। ১০০ কি মি হাইটা ফালাইসি বলতে পারবো।

আমি এই টা শুরু করার আগে ভাবসি অনেক। আমি যদি আলাদা কইরা টাইম বাইর কইরা এই কাজ করতে যাইতাম তাইলে দুই দিন করার পর আমার মনে হইত না থাক, আজকে বাদ দেই, সময় নাই। ভাবসিলাম অফিসে আসা যাওয়া করলেই পাঁচ কিলোমিটার হয়া যাইব। কিন্তু পরে ওই প্ল্যান টা কেন্সেল করতে হইসে কারণ , এক, মাঝখানে অফিস করার গ্যাপ পরবে।আমারে আইলসামি পায়া বসবে। আর দুই, অফিসের পর আমার যদি টায়ার্ড লাগে তাইলে দেখা যাবে ওই দিন রিকশা নিসি অথবা আসার সময় যদি লেট হয় কোনদিন তখন আমি হাইটা না গিয়া রিকশা নিব। আর গেল অই দিন এর হাটা।

আমার এই স্বভাব আমি জানি। কিছু না করার এক্সিউজ তৈরি করার ক্ষেত্রে আমি সারাজীবনই ওস্তাদ আসিলাম। তাই ঠিক করসি আলাদা কইরা কিছু করুম না, লাইফস্টাইল এর সাথে এডপ্ট করা যায় এরম কিছু করা লাগবো। আমি হাটার সময় কোন টি শার্ট, ট্রাউজার, রানিং সুজ ইত্যাদি পরি না। হাটার আগে স্ট্রেচিং, হাটার পরে কুলিং অফ ইত্যাদি করি না। অফিস থেইকা বাইর হই। জিপি হাউজের সামনে দাঁড়াইয়া একটু ওয়েইট করি। আমার এন্ডোমোন্ডো এপ এর জিপিএস টা লক হওয়া পর্যন্ত দাঁড়াইয়া থাকি। লক হওয়া মাত্র স্টার্ট বাটনে ক্লিক কইরা হাটা শুরু করি।

পাঁচ কিলোমিটার হাটতে আমার এক ঘণ্টার মত লাগে। আমি খুবি হেলতে দুলতে আসে পাসের তামশা দেখতে দেখতে হাটি। কোন তাড়াহুড়া করি না। অনেকে জগিং এর সময় গান শোনে। আমার হেডফোন নেপাল থেইকা ফিরার সময় রাশার কাছে রয়া গেসে। তাই গান শুনার উপায় ও নাই। তাই রাস্তার একশোটা মানুষ যেভাবে হাইটা যাইতাসে আমি ওই ভাবেই খুব উদ্দেশ্য আছে হাটার ভাব নিয়া হাটতে থাকি। পার্থক্য শুধু অদের যাওয়ার অনেক জায়গা আর আমার কোথাও যাওয়ার নাই।

হাটতে হাটতে বিভিন্ন ফিলোসফিকাল চিইন্তা ভাবনা আস্তে থাকে মাথায়। আর আমি সব চিন্তা গুলারেই পাত্তা দিয়া চিন্তা করতে করতে হাটি। আমার হাটার এরিয়ায় ফুটপাথ গুলার অবস্থা কিছু কিছু যায়গায় খুবি করুন। কিন্তু অভারল আমার মনে হইসে, হাটার পরিবেশ ভাল। বসুন্ধরার ভিতরে যে সব খালি প্লট আছে ওই গুলায় সন্ধ্যার পর জোনাকি পোকা দেখা যায়। আমি হাটতে হাটতে দাঁড়ায় যাই দেখার জন্য। জোনাকি পোকা কি সুন্দর একটা জিনিশ। অন্ধকারে মিট মিট করে মনে হয় গিয়া শুইয়া পরি ওই খানেই আর চোখের উপর উড়ুক। একটা জিনিশ খেয়াল করসি যে সব ঝোপ ঝাড় আলোর মধ্যে ওই খানে জোনাকি পোকা থাকে না। থাকে, জংলা মত অন্ধকার জায়গায়। বসুন্ধরার সব রাস্তায় যে এখনো লাইট বসায় নাই এই জন্য আলহামদুলিল্লাহ।

আজকে হাটতে হাটতে একটা গর্ত দেখসি বসুন্ধরার মেইন রোড। ইয়াব্বড় গর্ত। পইরা গেলে পুরাডাই ঢুইকা যামু এক্কেরে এমন বড়। আমি পাশে দিয়া যাইতে যাইতে ভাবসি যদি কোনদিন খেয়াল না করি আর পইড়া যাই তাইলে কি মানুষ বুঝবে? নাকি গর্তের ভিতর থেইকা আমি “এই যে হেলো, আমি পইড়া গেসি” বললে ভয়ে দৌড় দিবে।

কালকে খিলগাঁও থেইকা সুভাস্তু হাইটা আসছি। ভালাই লাগসে। একদম সুজা হাটতে হাটতে আইসা পরসি। কুন ডাইনে বামে নাই। সারাক্ষণ ফুটপাথেই ছিলাম। মেইন রোডের ফুটপাথের সবচেয়ে গা জ্বালাকর ব্যাপার হইল জ্যাম এর সময় যখন মটর সাইকেল ওলারা ফুটপাথে উঠায় দ্যায়। আচ্ছা দিসে ভাল, তারাতারি যাওয়া দরকার হয়তো তার। কিন্তু ফুটপাথ উঠা বাইক যদি পিছে আইসা হর্ন দিতেই থাকে তাইলে কেমন মেজাজ খারাপ হয়? এদের লাইথ্যায়া লাইথ্যায়া রাস্তায় নামায় দেওয়া প্রত্যেক নাগরিক এর পবিত্র দায়িত্ব।

২৫ কিলোমিটার হাইটা আমার শিক্ষা হইল, শেষ কিলোমিটার টা সবচেয়ে কঠিন। মনে হয় যেন শেষ ই হইতে চায় না, পায়ে ব্যথা লাগে, মাথা ঘুরানতিস লাগে। কিন্তু যদি এগুলা পাত্তা না দিয়া সামনের দিকে হাটতে থাকি তাইলে সবকিছুই সম্ভব।

 

১৫৮/৩৬৫

লেখার তারিখঃ আগস্ট ০৪, ২০১৫ । ১১.৫৭ পি এম

 

আজকের সকাল টা শুরু হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর লেখা সর্বশেষ কবিতা পড়া দিয়া। এই কবিতা টা কবি মৃত্যুর ৭ দিন আগে লেখেন। উনার লেখার মত অবস্থা ছিল না। উনি বলেন আরেকজন শ্রুতিলিখন করেন। কেমন একটা আচ্ছন্ন হয়া ছিলাম অনেক্ষন কবিতা টা পড়ার পর। খুব যে আবেগে আপ্লুত হয়া গেসিলাম তা না। আমি শুধু মৃত্যু শয্যায় একজন কবির কথা ভাবতেসিলাম। যার কাছে তখন প্রতিটা কবিতাই শেষ কবিতা। আমি হইলে কিসের কথা বলতাম তখন?

নিজের জীবন কত সুখে কাটসে, আল্লায় কত ভাল রাখসে, সবাইকে ধন্যবাদ এইটাইপ আবর্জনা কিছু লিখতাম হয় তো। কিন্তু উনি তো সাধারণ ছিলেন না। শেষ সময় আইসাও তিনি স্রষ্টা আর মানুষের উদ্দেশ্যে তার জীবন থেইকা পাওয়া শিক্ষা পাস অন কইরা দিয়া যাইতে সচেষ্ট ছিলেন। কবিতা টা একবার লিখি এইখানে, তাইলে বুঝতে সুবিধা হইব কুন লাইনে ট্রেন চলতাসে। যেহেতু শ্রুতিলিখন এ লেখা কবিতা তাই কবি এই কবিতার কোন নাম দিয়া যান নাই।

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনাজালে,
হে ছলনাময়ী I
মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছ নিপুণ হাতে
সরল জীবনে I
এই প্রবঞ্চনা নিয়ে মহত্ত্বেরে করেছ চিহ্নিত;
তার তরে রাখনি গোপন রাত্রি I
তোমার জ্যোতিষ্ক তারে
যে-পথ দেখায়
সে যে তার অন্তরের পথ
সে যে চিরস্বচ্ছ,
সহজ বিশ্বাসে সে যে
করে তারে চিরসমুজ্জ্বল I
বাহিরে কুটিল হোক অন্তরে সে ঋজু,
এই নিয়ে তাহার গৌরব I
লোকে তারে বলে বিড়ম্বিত I
সত্যেরে সে পায়
আপন আলোকে ধৌত অন্তরে অন্তরে I
কিছুতে পারে না তারে প্রবঞ্চিতে,
শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে
আপন ভান্ডারে I
অনায়াসে যে পেরেছে ছলনা সহিতে
সে পায় তোমার হাতে
শান্তির অক্ষয় অধিকার I

এই কবিতা পইড়া আমি যা বুঝসি তা একটু সুজা কইরা বুঝানির চেষ্টা করি। কবিতা টার প্রথম ৪ লাইন হইল

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনাজালে,
হে ছলনাময়ী I
মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছ নিপুণ হাতে
সরল জীবনে I

এই ৪ লাইন এই কবিতার সবচেয়ে হতাশাবাদী লাইন। এই খানে প্রথমের সৃষ্টি করতারে ছলনাময়ী বইলা কবি বলসেন, তুমি তো যা সৃষ্টি করসো, তা বুঝার রাস্তা টা ছড়াইয়া ছিটায় রাখসো সারা দুনিয়াতেই । মানুষের জীবন প্রথমে সহজ সরল ই ছিল, তারপর সৃষ্টিকর্তা আস্তে আস্তে ট্রাস্ট নামের একটা ইলিউশন তৈরি কইরা আমাদের সরল জীবনে ইঞ্জেক্ট কইরা দিলেন আর সব প্যাচ পুঁচ লাইজ্ঞা গেল।

তার পরের কয়েকটা লাইনে আবার কবি এই কনফিউশন দূর করার জন্য লিখলেন।

এই প্রবঞ্চনা নিয়ে মহত্ত্বেরে করেছ চিহ্নিত;
তার তরে রাখনি গোপন রাত্রি I
তোমার জ্যোতিষ্ক তারে
যে-পথ দেখায়
সে যে তার অন্তরের পথ
সে যে চিরস্বচ্ছ,.
সহজ বিশ্বাসে সে যে
করে তারে চিরসমুজ্জ্বল I

কবি কইতে চাইতাসেন যে, এই যে মানুষের লগে চিটিং, এইটা দিয়াই কে মহৎ আর কে শয়তান তা বুঝা যায়। এই মহৎ মানুষ এর জীবনে কোন কাল রাত্রি নাই, সব ই সকাল। যে নিজের কাছে অনেস্ট, তর মন সবসময় স্বচ্ছ জলের মত ট্রান্সপারেন্ট থাকে। রেজাল্ট এ গিয়া যতই ধাক্কা খাক, যতই কষ্ট পাক, মানুষ কে অনেক সহজে বিশ্বাস করতে পারি , এই বিশ্বাস টাই তারে জীবনে সবার কাছে জল জল কইরা জ্বলতে সাহায্য করে।

পড়ের লাইন গুলায় কবি কিছু এক্সেপশনাল মানুষের বর্ননা দিসেন। এইটা আমার কাছে অনেকটা এগজামপল সেট করার মত মনে হইসে। কবি লিখসেন,

বাহিরে কুটিল হোক অন্তরে সে ঋজু,
এই নিয়ে তাহার গৌরব I
লোকে তারে বলে বিড়ম্বিত I
সত্যেরে সে পায়
আপন আলোকে ধৌত অন্তরে অন্তরে I

বাইরে দিয়া হয়তো লোকটারে অনেক ঝামেলা ওয়ালা মনে হইতে পারে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে অনেক সোজা। এইটা তার গর্বের একটা বস্তু। লোকজন তারে ডিস্টারবড বললেও আসলে সে এইটা নিয়াও কেয়ার করে না বেশি। সে নিজের মন কে বুঝাইতে বুঝাইতে সেই পর্যায়ে নিয়া যাইতে পারে যেখানে তার কাছে সত্য ছাড়া আর কিছু গ্রহন করার মত থাকে না।

কিছুতে পারে না তারে প্রবঞ্চিতে,
শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে
আপন ভান্ডারে I
অনায়াসে যে পেরেছে ছলনা সহিতে
সে পায় তোমার হাতে
শান্তির অক্ষয় অধিকার I

তারে কেউ ই ঠকাইতে পারে না। কারণ তার কাছে ঠকানোর সংজ্ঞাটাই অন্য। মানুষ কে বিশ্বাস কইরা যে ঠকতে হবে, আর সবাই যে খালি চিটীং বা ছলনাই করবে এইটা সে আগেই জানে। তাই এই সব সহ্য করা তার কাছে কোন ব্যাপার ই না। শেষ হাসি টা , শেষ পুরসকার টা সেই পায় । আর সেই পুরশকার হইল মনের শান্তি।

একটা কবিতা লাইন বাই লাইন এর লিটারেলি অর্থ বাইর করা খুবি গর্হিত কাজ। আমি কারো চিন্তা ভাবনা কে এই লেখায় যা বলসি তার মধ্যে সীমাবদ্ধ কইরা দিতে চাই না। তবু কবিতাটা পইড়া যে অর্থ টা মনে হইসে তাই লিখলাম। আগামীকাল আজকের থেকে একটু বেশি জ্ঞানী হবো। তখন হয়তো অন্য কোন অর্থ যোগ হবে। আবারো।

 

 

 

১৫৭/৩৬৫

লেখার তারিখঃ আগস্ট ০৩, ২০১৫ । ১০.৩৭ পি এম

 

আমার মনে হয় কবিতা পড়ার অভ্যাস থাকা টা খুব দরকার। আমাদের দেশে ইন জেনারেল কবিতা পড়া কে দেখা হয় সাধারণত দুই ভাবে। এক, সে কবিতা পরে তারমানে সে হোপলেসলি রোমান্টিক, তার আর কাজ কাম নাই। আর দুই, ও তো আবার “কবিতা টবিতা” পরে। মানে কেউ কবিতা পড়ে শুনলে আমরা তারে হয় খুব আসমানে তুইলা দেই নাইলে হাইসা উড়ায় দেই। এইটা ঘটে আমাদের না জানা থেইকা। আমাদের ডিসিশন এ পৌঁছানোর কালাচারটা হইল, আমরা যেই জিনিশ বুঝি না সেই জিনিশ কেউ করলে হয় আমাদের পারসেপশন বলে, হয় সে পাগল, নাইলে সে ব্রিলিয়ান্ট।

কিন্তু একটা মানুষের আর্ট এর সাথে পরিচয় যদি হয় কবিতা দিয়া শুরু তাইলে তার আর পিছনে তাকানোর দরকার ই হয় না। পরবর্তিতে সে ছবি তোলা শিখুক, বা সিনেমা বানাক বা পেইন্টার হোক কবিতার স্পর্শ টা থাকেই বুকের ভিতর। কবিতার মজাটা হইল, এখানে শব্দের অরণ্যে কিছু জোনাকি পোকার মত অর্থ কবি মুঠো ভরে ছড়িয়ে দেন আনাচে কানাচে । কেউ কেউ সারা অরণ্য খুঁজে শুধু গাছ দেখে চলে আসে আর কেউ কেউ দেখে একটা দুইটা জোনাকি। অথচ কবিতা প্রেমিক জানে যে এইখানে আরো অনেক বিস্ময় অদেখাই রয়া গেল। হয়ত বিশ পচিশ বছর পর আবার কবিতা টা পড়লে আবার সেই খুঁজে পাওয়া পরিচিত জোনাকি পোকা গুলার সাথে নতুন কিছু আলো পোকা বের হয়ে আসে। ভাল কবিতার মজা টা এইখানেই।

পারিবারিক ভাবে আমাদের কবিতা পড়া কে উৎসাহিত করা হয় না যত টা ছড়া কে করা হয়। অজগর টি আসচে তেড়ে, আমটি আমি খাব পেড়ে তো এখন কেউ পড়ে না। বরং ট্যাব এ নার্সারি রাইম দেখতে দেখতে আমরা শিখতেসি কবিতা একটা ভিজুয়াল জিনিশ। কবিতার সাথে ছবি থাকতে হয়, গান থাকতে হয়।

এর সহজ বোধ্যটা হয়ত তার একটা কারণ। আরেক্টা কারণ বাবা মা যা বোঝেন না, সেইদিকে তার সন্তান কে যেতে দিবেন না এইটাই স্বাভাবিক। অনেকে ইচ্ছা করেই কবিতার দিকে নেন না সন্তান কে। কবিতা পড়ে পড়ে কবি হবে? গেল ভবিষ্যৎ গেল। এই রকম ভাবার লোকজন কম না। কিন্তু যে ইঞ্জিনিয়ার কবিতা জানে বা যে ডাক্তার এর ড্রয়ারে প্রেসক্রিপশন প্যাড এর পাশে একটা শঙ্খ ঘোষ বা আবুল হোসেন এর কবিতার বইও উঁকি মারে সে যে মানুষ হিসাবে তার পেশায় কত খানি আলাদা , আফসোস সেটা তার কলিগরা এসে বাবা মার কাছে সাক্ষী দিতে পারে না।

আমার কবিতার সাথে পরিচয় টা খুবি অদ্ভুত ভাবে। আমার মনে নাই আগে এই গল্পটা লিখসি কিনা কোথাউ। আমি তখন পড়ি নার্সারি তে। প্রথমে প্লে গ্রুপ পড়ে আসছি “সেকরেড হার্ট” স্কুল এ তারপর ভর্তি হইসি পুরানা পল্টন এর “লিটিল জুয়েলস” স্কুল এর প্লে গ্রুপ এ। নতুন স্কুল , যতদূর মনে আসে খুবি ভয়ে ভয়ে থাকতাম। এর মধ্যে স্কুল এ কি জানি এনুয়াল ফাংশন হবে। আমার আম্মা কি মনে কইরা দলগত আবৃত্তি তে আমার নাম দিয়া দিল । একটা মিস ছিল নাম ভুইলা গেসি, উনি আরো বেশি উৎসাহী ছিলেন। শুধু স্টেজ এ উইঠা একটা কবিতা দেইখা দেইখা পইড়া চইলা আসলে হবে না, মুখস্ত বলতে হবে, আবৃত্তি করতে হবে, এক্সপ্রেশন দিতে হবে। আমি তখনো রিডিং ই পড়তে পারি না ভাল মত। শুরু হইল এক সপ্তাহ ব্যাপী আমাদের কবিতা মুখস্ত করার ট্রেনিং। আম্মা পড়তো, আমি শুনতাম। তারপর বলতে হইত । সব মুখে মুখে। ক্লাস এর সবার মধ্যে থেইকা ৫ জন কে চূড়ান্ত বাছাই করা হইল। আমাদের এক সাথে কোরাসে পুরা কবিতা টা স্কুল এর অনুষ্ঠানে সবার সামনে পড়তে হবে।

মনে হইতে পারে নার্সারির পুলাপান আর কি কবিতা পড়ব। ৫ জন মিল্লা টুইংকেল টুইংকেল বইলা কিছুখখন আদেখলাপনা কইরা আইসা পড়ব টাইপ হয়তো। কিন্তু না। আমার মুখস্ত করতে হইসিল, সুকুমার রায় এর “ভাল রে ভাল” (http://lib.pmo.gov.bd/s-pustak/Sukumar-roy/abol-tabol/valore-valo.html)। একটা ২৪ লাইন এর কবিতা। এমন সব শব্দ দেওয়া যা কঠিন তো পরের ব্যাপার, শুনিই নাই কোনদিন। তারপরও কেমনে মুখস্ত করসিলাম জানিনা। অনুষ্ঠান এর দিন ৫ জন এর মধ্যে ১ জন আসল না। চার জন উঠলাম স্টেজ এ। একজন ডরে দাঁড়ায় দাঁড়ায় ওই খানেই মুইত্যা দিল, আমি দেখলাম খাকি হাফপ্যান্ট এর একটা দিক হঠাৎ গাড় হয়া গেল আর সেই ধারা মোজা টপকায়ে স্টেজ এর কার্পেট দখল কইরা নিল দ্রুত।

একজন উইঠাই এত মানুষ দেইখা আম্মু আম্মু বাসায় যাবো বইলা কান্দা শুরু কইরা দিল, তারে আইসা আমাদেরর ক্লাস টিচার কোলে কইরা নিয়া গেল।

আর একজন পুরা কবিতা ভুইলা গিয়া মনের আনন্দে মাইক্রোফোন চাটা শুরু কইরা দিল।

আমার শুধু মনে আছে, স্টেজে উঠার পর আমি এত উঁচা স্টেজ এ জীবনে প্রথমবার দাঁড়াইয়া আবিষ্কার করসিলাম মাঠ এর ওই পাশে একটা দোলনা আছে যেদিক আমি যাই নাই কোনদিন। আমি লাল রঙ এর শিকলের দোলনাটার দিকে মুগ্ধ হয়া তাকায় তাকায় পুরা কবিতা একলা বইলা শেষ করসিলাম। অনেক তালি হইসিল সেদিন। আর স্টেজ থেইকা সবাইরে বাউ কইরা নাইমা আসার পর আম্মা জরায় ধরসিল। আর বলসিল, এইত্তো আমার ইথার। আমি জানতাম তো।

আম্মা যে কি জানতো, আমি ই জানলাম না এখনো।

 

 

১৫৬/৩৬৫

লেখার তারিখঃ আগস্ট ০২, ২০১৫ । ১০.৩৬ পি এম

 

Stars : A very Short Introduction বই টা পড়তে পড়তে অনেক কিছু ভাবা যায়। হয়তো পড়তাসি একটা জিনিশ কিন্তু ভাবতে ভাবতে গেসি গিয়া অনেক দূর। ওই জন্য মাঝে মাঝে পড়ার বিরতি ও দিতে হইসে। এই যেমন গ্রাভিটি নিয়া পড়ার সময় ভাবতাসিলাম, আচ্ছা এই যে গ্রহ গুলা সূর্যের চাইরপাশে এরম গোল গোল ঘুরতাসে এর কারন ডা কি? এমন তো না যে কেউ পৃথিবীর ইশটিয়ারিং ধইরা বয়া রইসে আর হারাক্ষন উস্তাদ ডাইনে ভেনাস বামে মার্স, সুজা গিয়া ডাইনে কাটেন বরাবর এরম করতাসে। যদি পৃথিবী আর সূর্যের মধ্যে গ্রাভিটি থাইকাই থাকে আর গ্রাভিটি শুধু আকর্ষণ ই করে, তাইলে ক্যান আমরা ও হট বন্ধু আমার বইলা সূর্যের দিকে ছুইটা যাইতাসি না?

প্রশ্ন মাথায় নিয়া আর সামনে পড়া ঠিক না। তাইলে খালি পইড়াই যামু কিন্তু মাথার প্রসেসর বিজি থাকবো প্রশ্নডা লওয়াই। তাই বই খান উলটাইয়া থুইয়া চোখ টা বন্ধ কইরা ভাবতে শুইলাম। বেপারটা এসো নিজে করি টাইপ কোন পরীক্ষা কইরা কি উত্তর পাওয়া যায় কিনা চিন্তা করতে লাগলাম।

কল্পনা করলাম একটা টেবিল এর মধ্যে একটা পেরেক গাথা। ধরি এইটা সুর্য। এই বার একটা আংটি রাখলাম টেবিল এর উপর পেরেক থিকা একটু দূরে। ধরি এইটা পৃথিবী। এখন তাইলে পেরেক আর আংটির মধ্যে একটা দরি বান্দি। এমন ভাবে রাখি যাতে দড়ি টা টান টান হয়া থাকে। ধরি এই দড়িটা রিপ্রেজেন্ট করে সুর্য আর পৃথিবীর মধ্যে মাধ্যাকর্ষণ। যেহেতু মাধ্যাকর্ষণ শুধু আকর্ষণই করে, তাই উচিত ছিল আংটিটা পেরেকের দিকে ছুউটা যাবে আর দড়ী টা ভাজ হয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে তো তা হয় না , পৃথিবী তো ঘুরে। তাইলে কেমনে কি?

একটা আঙ্গুল এর মাথা আংটিতে ঢুকায়া টান দিয়া দড়ীটারে টান টান করি। এইবার আঙ্গুল দিয়া আসতে আস্তে ট্রাই করি আংটিটা দূরে নিয়া আস্তে। দেখা যাইব আংটি তো দড়ী ছিরা বাইর হইতে পারতাসে না। কিন্তু আঙ্গুলের টান এর কারণে পেরেকের চারপাশে গোল গোল ঘুরতাসে।

পৃথিবী ঘুরেও এই কারণে। এই খানে দড়ীটা সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যে মাধ্যাকর্ষণ বা গ্রাভিটি। আর আমরা যে আঙ্গুল ভইরা টান দিলাম, সেইটা হইল পৃথিবীর উপর আশে পাশের গ্রহ নক্ষত্রের সাথে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। এই দুই শক্তির মাঝখানেই এমন এক জায়গায় পরসে পৃথিবি। যাতে সে উলটা দিকে যাইতে গেলে সূর্য টানে। আর সূর্যের দিকে যাইতে গেলে পিসের অন্যান্য গ্রহের গ্রাভিটী টানে। আর বেচারা গোল গোল ঘুরে।

এদ্দুর ভাইবা মনে হইল, আহা বুইঝা ফালাইসি। এইবার আগে বারি। আরেকটু আগে যাইয়া লেখক প্রশ্ন করলেন, আইচ্ছা, যদি দুইটা জিনিষের মধ্যে গ্রাভিটী থাকে তাইলে তো পৃথিবীর উপরের লেয়ার (আমরা যার উপর থাকি) আর নিচের লেয়ার মধ্যেও গ্রাভিটির টান আছে। তাইলে কেন উপরের লেয়ার টা ডাইব্বা গিইয়া নিচের লেয়ার এর সাথে মিশা যাওয়ার চেষ্টা করতাসে না?

এইটার উত্তর পাইসি আরো কয়েক পেজ পরে গিয়া। তয় এইটা এখন লিখুম না। আরেকদিন।

 

১৫৫/৩৬৫

লেখার তারিখঃ আগস্ট ০১, ২০১৫ । ১০.০১ পি এম

 

দিনের প্রথম ভাল কাজ টা হইল, আজকে আমি ৫.২৪ কিলোমিটার হাটসি। এইটা একটা নতুন প্রজেক্ট। প্রতিদিন ৫ কিলোমিটার কইরা হাটবো ঠিক করসি। আমার সুভাস্তুর বাসা থেইকা বসুন্ধরার অফিস মুটামুটি ৩ কিলোমিটার এর মত। আমি যদি প্রত্যেকদিন হাইটা যাওয়া আসা শুরু করি তাইলে এই টার্গেট পুরন হওয়া খুব কঠিন কিছু হওয়ার কথা না। সাথে দুই টা এডিশনাল জিনিশ যোগ হবে, অফিসের লিফট ব্যাবহার করা বাদ দিতাসি (আমি বসি লেভেল ৬ এ) আর চিনি দেওয়া খাবার যত টা পারা যায় খাওয়া কমায় দিতাসি (যেমন কোক জাতীয় ড্রিঙ্কস, চা, কফি ইত্যাদি)। আমি জানি এইভাবে ওজন কমে। আমি এর আগে এই ভাবে ওজন কমাইসি। ৮৯ কেজি থেইকা ৮৩ কেজি করসিলাম ১ মাস এ। তখন ৫ কিলোমিটার সাইকেল চালাইতাম। এইবার করতাসি হাটা হাটি।

হাটতে ভাল্লাগসে আজকে। রোদ ছিল না। মেঘ মেঘ আকাশ। আর অনেক বাতাস। আমি আকাশের মেঘের যাওয়ার ডিরেকশন দেখতেসিলাম আর বাতাসের ডিরেকশন বুঝার ট্রাই করতাসিলাম। যদ্দুর বুঝলাম ইট ওয়াজ গোয়িং ফ্রম ইস্ট টু ওয়েস্ট। তাইলে রানওয়ের উপর জোরালো ক্রস উইন্ড থাকার কথা। নর্থ এর দিকে যখন হাটতে সিলাম তখন বেশ কয়েকটা টেক অফ দেখসি। এয়ার এরাবিয়া আজকে শার্ক্লেট ওয়ালা ত্রি টুয়েন্টি পাঠাইসিলো ।

হাটতে হাটতে অনেক গুলা গল্প ঘটতে দেখলাম। একটা জায়গায় দেখলাম একটা রিকশা আইসা থামলো, ছেলেটা রিকশা থেইকা নাইমা গেল, মেয়েটা বাই বইলা হুট টা উঠায় দিয়া চইলা গেল, দুই জন দুই দিকে আর কেউ কারো দিকে ফিরাও তাকাইলো না। কত লক্ষবার এই দৃশ্য হইতাসে এই শহরে না? কতবার নিজেই ছিলাম ছেলেটার জায়গায়। আমার একবার মনে হইল, ছেলেটারে ডাইকা বলি, আরে বেকুব, হুড টা লাগসে কিনা চেক করেন, আর রিকশা ওয়ালা রে বলেন, সাবধানে নিয়া যাইতে, (ফাইজলামি কইরা বলতে পারেন মামা রুগী মানুষ আস্তে চালায়েন, তাইলে হাটার চাইতেও আস্তে চালাবে :p )। একটু না হয় দাঁড়াইয়াই থাকেন যতক্ষণ দেখা যায় রিকশা টা। রিকশা থেইকা নামলেই আজকের মত ভালবাসাবাসি শেষ হয়া যায় না, বেক্কল পোলাপান।

যমুনা ফিউচার পার্ক খুলসে দেখলাম। একটা লোক রে দেখলাম দুই পিচ্চির হাত ধইরা হাসি হাসি মুখ কইরা রোলার কোস্টার এর দিকে আগাইতাসে। পিচ্চি দুইটার হাসির চেয়ে উনার হাসির ব্যাসার্ধ বেশি। মার্কেটের ঢুকার গেটের ঠিক বাম পাশেই একটা ফুচকার দোকানে দেখলাম একজন পানির বোতল হাতে নিয়া ঝাল এ হু হা হু হা করতাসে । তারে দেইখা মনে হইতাসিল হু হা করাটাই উনার বেশি মজা লাগতাসে, পানি খাইয়া হু হা এর মজা নষ্ট করতে চায় না।

আসার পথে শাহজাদপুর বাস স্ট্যান্ড এ দুই রিকশাওয়ালার ধুম ধাম মাইর পাইট লাইগা গেল। আমার তখন এন্ডোমন্ডো তে ৪.৮ কিলোমিটার চলতাসে তাই থামার উপায় ছিল না। নাইলে দাঁড়ায় দাঁড়ায় তামশা দেখতাম কিছুক্ষণ। কেন মারা মারি লাগসে বুঝতে পারি নাই। তবে দুই জন এরই দুই জন এর লুঙ্গি টাইনা খুইলা ফালানো তে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেসে। একজন রে নিজের লুঙ্গি সামলাইতে সামলাইতে বলতে শুনসি খালি, ওই আমি তরে কি করসি? ওই আমি তরে কি করসি?

বাসায় ঢুকার আগে একজন ফোন দিল। উনি আমাকে ফেসবুক থেইকা চিনেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটির ওমেন এন্ড জেন্ডার স্টাটিজ এর লেকচারার। সুভাস্তুর নিচে আইসা দেখা কইরা গেলেন আমার সাথে। আমার জন্য জেট এয়ারওয়েজ এর দুইটা সেফটি কার্ড আর একটা বুমির ব্যাগ নিয়া আসছেন। আমি এত খুশি হইসি আর এত লজ্জা পাইসি যে উনার দিকে তাকানির বদলে খালি সেফটি কার্ড আর বুমির ব্যাগ এর দিকেই তাকাইয়া আসিলাম। এত একাডেমিক একজন লোক বলসেন উনি নাকি আমার লেখার ভক্ত আর নিয়মিত পড়েন। আমি লইজ্জায় দাঁত কেলানি ছাড়া আর কিছুই করতে পারি নাই। সিরিয়াসলি কেউ প্রশংসা করলে আসলে কি করতে হয়? আমি ত বিগলিত হওয়া ছাড়া আর কিছু পারি না।

বাসায় আইসা এসি ছাইরা চেগায়া শুয়া ঠাণ্ডা হয়া তারপর বই গুছানির কাজ টা কিছু দূর আগাইসি। আমার বই এর সংখ্যা মাশাল্লা অনেক। দুই বুক সেলফ ঠাসা ঠাসি কইরা ভরা। এখন বই গুলারে একটু সুন্দর কইরা গুছাইয়া রাখুম বইলা মনস্থির করসি। একটা বুকশেলফ গুছানি শেষ। এখন ২য় টা ধরসি। সব বই আপাতত আনলোড কইরা মাটিতে নামায়া প্রাথমিক সর্টিং শেষ হইসে। এরপর বুক শেলফ টারে ঠেইলা উলটা পাশে নিয়া আসুম। তারপর আবার সেইটায় বই লোডিং শুরু হবে। একা থাকার সুবিধা হইল এই কাজ টাই কয়েক দিন ধইরা করা যায়। আপাতত পুরা বাসার ফ্লোর ভর্তি খালি বই আর বই। আমার যত বই আছে আমি পড়সি তার ৩০ ভাগ মাত্র। আর ৭০ ভাগ বই পড়া বাকি। কি আনন্দময় একটা ব্যাপার।

যেই বইটা পড়া শুরু করসিলাম, Stars: A Very Short Introduction ওইটা আরো কিছুদূর আগাইসি। এখন পেজ ২০ এ। আজকে পড়সি গ্র্যাভিটি নিয়া। গ্র্যাভিটি বা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি একটা শক্তি হিসাবে অন্যান্য শক্তির মত অত শক্তিশালী না। অপেক্ষাকৃত দুর্বল শক্তি কিন্তু এর মুল বইশিষ্ট হইল এইটা এক মুখি শক্তি।ইলেকট্রিকাল শক্তির ক্ষেত্রে কি হয়? একি রকম চার্জ হইলে এক অন্যরে বিকর্ষণ করে , আর বিপরীত হইলে আকর্ষণ করে তাইনা?

গ্রাভিটির এই ঝামেলা নাই। সে খুবি ভাল আর লক্ষ্মী। সে সবাইরে খালি আকর্ষণ ই করে। নাইলে তো হের নাম মাধ্যাবিকর্শন শক্তিই হয়া যাইত। এই আকর্ষণ দুইটা বস্তুর ভর এর গুনফল এর সমানুপাতিক। সুজা কইরা বল্লে, দুইটা এক কেজি এক কেজি জিনিশের মধ্যে যেই মাধ্যাকর্ষণ (১ গুন ১ = ১), তার চেয়ে, একটা দুই কেজি আরেকটা তিন কেজি ওজনের জিনিষের মধ্যে মাধ্যাকর্ষণ (২ গুন ৩ = ৬) বেশি হইব।

আবার যত দূরে থাক রবে আমারই, ওয়ারফেজ এর এই গানেরও ফ্যান হইল গ্রাভিটি। মানে দূরত্ব বাড়ার লগে গ্রাভিটির বাড়নের কমনের একটা ব্যাপার আসে। এই ব্যাপার টা পাওয়া যাইব যদি দুরত্ব রে স্কয়ার কইরা তারে উল্ডাই তাইলে। সুজা কইরা বললে, দুইডা জিনিষের ওজন যতই হোক, যদি এগো মধ্যে দূরত্ব এখন কার থিকা দিগুণ বাড়াই তাইলে গ্রাভিটি কমব ৪ (২ এর স্কয়ার ৪) গুন। আর যদি দূরত্ব তিন গুন বাড়াই তাইলে গ্রাভিটি কমব ৯ (৩ এর স্কয়ার ৯) গুন। দূরত্ব যত বাড়বো দুইডা জিনিষের মধ্যে গ্রাভিটি তত কমব। এইডারে ইংরাজি তে কয় ইনভারসলি প্রোপরশনাল।

আমাদের অতি প্রিয় তারা, মহান সূর্য লওয়াও অনেক কিছু পড়সি, তয় অগুলা আজকে আর না লিখি। মুঞ্ছাইলে কালকে লিখুম নে।

 

১৫৪/৩৬৫

লেখার তারিখঃ আগস্ট ০১, ২০১৫ । ১২.০৮ এ এম

 

আজকে আমি আর কারিব ভাই সুষম ভাই এর সাথে দুপুর আড়াইটা থেইকা শুরু কইরা বিকাল সাড়ে পাঁচ টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা আড্ডা দিসি। এর মধ্যে ব্যাপক খানা দানা হইসে, আধা ঘণ্টা মনে হয় ফটোগ্রাফি, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি এর ভূত ও ভবিষ্যৎ , গ্রুপ চ্যাট এ ভূত এর আসর ইত্যাদি নিয়া আলাপ হইসে আর বাকি পুরা টা টাইম আলাপ হইসে এভিয়েশন নিয়া। সাথের যারা ছিল তারা ওয়াজ টু নাইস টু বি বিরক্ত নাইলে চেইতা গিয়া বাইন্ধা থুইত আমগো রে। এই আলাপ এরি শেষের দিকে সুষম ভাই উঠাইল “অপারেশন অপেরা” এর কথা । আমি এত এক্সাইটেড হইসি উনার মুখে গল্প শুইনা যে বাসায় আইসা এইটা নিয়া অল্প স্বল্প রিসার্চ করলাম গুগল এ। আমার কাছে মনে হইসে এই গল্প টা বাংলায় লিখা রাখা দরকার।

চুম্বক অংশ বা মুল কথা বা আসলে ঘটনা কি হইসিলঃ

১৯৮১ সালের ৭ ই জুন, ইজরাইল বিমান আক্রমণ চালাইয়া ইরাক এর একটা নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর ধ্বংস কইরা দ্যায়। এই অপারেশন এর নাম ই ছিল “অপারেশন অপেরা”

ক্যান আমি এইটা নিয়া এইটা নিয়া এত এক্সাইটেডঃ

কারন যেমনে পুরা অপারেশন টা পরিচালনা করা হইসিল তার পিছনে ছিল ব্রিলিয়েন্ট একটা প্ল্যানিং। আর পড়তে পড়তে আমি বুঝসি যে ইরান যতই ইসলামি রাষ্ট্রের ভাব সাব মারুক, স্বার্থের প্রশ্নে সে ইসরাইল এর সাথে হাত মিলাইতেও দ্বিধা করে নাই।

ব্যাকগ্রাউন্ডঃ

ইরাক তার পরমাণু কর্মসুচি আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করে ১৯৬০ সালের দিকে। ১৯৭০ সালে আইসা দেশটা ভাবতাসিল এক্সপানশন দরকার। তাই তারা একটা নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর কেনার চিন্তা ভাবনা শুরু করে। তারা ফ্রান্স আর ইটালির কাছে রিয়েক্টর কিনতে চায়, কিন্তু দুই দেশ ই ইরাক এর কাছে বড় মাপের রিয়েক্টর বেচতে অস্বীকার করে। কিন্তু ফ্রান্স শেষ মেষ ইরাকের কাছে “অসিরিস (Osiris)” ক্লাস এর একটা রিসার্চ রিয়েক্টর বিক্রি করতে রাজি হয় ৩০০ মিলিয়ন ইউ এস ডলার এর বিনিময়ে।

১৯৭৫ এ এই বেপারে ইরাক আর ফ্রান্স এর মধ্যে চুক্তি হয় আর ১৯৭৯ এ ইরাক বাগদাদ এর অদূরে আল তুওআইথা নিউক্লিয়ার সেন্টার এ রিয়েক্টর বানানোর কাজ শুরু করে।

আমেরিকা, ইরান আর ইসরাইল এর বিরোধিতাঃ

শুরু থেইকাই আমেরিকা আর ইসরাইল ইরাকের পরমানু কর্মসুচির বিরোধিতা কইরা আস্তেসিল। রিয়েক্টর কেনার ঘটনায় তারা আরো নইরা চইরা বসে। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা STRATFOR রিপোর্ট দ্যায় যে, এই রিয়েক্টর পরমাণু অস্ত্র বানানোর কাজে ব্যবহার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। অথচ ইসরাইল এই রিয়েক্টর ধ্বংস কইরা যাওয়ার পর হাভার্ড ইউনিভার্সিটির Richard Wilson সেই ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন এ যান এবং সব কিছু দেইখা অফিশিয়াল বিবৃতি তে বলেন যে, এই রিয়েক্টর এতই ছোট যে এইটা থেইকা পরমাণু অস্ত্র বানাইতে ইরাকের কয়েক বছর না, কয়েক যুগ লাগতো।

১৯৭৭ সালে Menachem Begin ইসরাইল এর প্রধানমন্ত্রি হওয়ার পর, মোসাড এর সহায়তায় এই রিয়েক্টর ধ্বংসের প্ল্যানিং শুরু করেন। তিনি একটা ফুল স্কেল মডেল ও বানানোর নির্দেশ দ্যান যার উপর ইসরাইলি বিমান বাহিনী প্র্যাকটিস করতে পারে। ফ্রান্স যখন ইরাকে তাদের রিয়েক্টর এর যন্ত্রপাতি পাঠানো মাত্র শুরু করতে যাবে, তখন মোসাড এর এজেন্ট রা ১৯৭৯ সালে ফ্রান্স এর বন্দরে প্রথম শিপমেন্ট টা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়া ধ্বংস কইরা দ্যায়। ফ্রান্স আবার পাঠায় পরে শিপমেন্ট। ১৯৮০ সালে মোসাড Yehia El Mashad নামে এক ইজিপশিয়ান পরমাণু বিজ্ঞানী যিনি এই প্রজেক্ট এ কাজ করতেন ইরাক এর সাথে, তাকে তার হোটেল রুমে খুন করে।

পাশের দেশ ইরানও ইরাক এর পরমাণু কর্মসুচি নিয়া টেনশন এ ছিল । যদিও ইসরায়েল তাদের নীতিগত ভাবে শত্রু, কিন্তু ইরাকের বিরুদ্ধে সাপোর্ট পাওয়ার আসায় ইরান ইসরায়েল এরও নির্দেশ মানা শুরু করে। ইসরাইল এর উস্কানি তে ১৯৮০ সালের ৩০ শে সেপ্টেম্বর ইরান দুইটা F-4 Phantom বিমান নিয়া এই রিয়েক্টর এ আক্রমণ চালায়। কিন্তু বেশি ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে নাই।

প্ল্যানিং:

১৯৮০ সালের দিকে আমেরিকার কাছে KH-11 Kennan স্যাটেলাইট ছিল। পইড়া যদুর বুঝলাম এইটা হাবল টেলিস্কোপ এর মত একটা স্যাটেলাইট যেইটা কিনা সেট করা পৃথিবীর দিকে মুখ কইরা। এইটা দিয়া আমেরিকা অই রিয়েক্টর এর তার আশে পাশের এলাকার ছবি তুইলা ইস্রাইল রে হেলপ করসিল জায়গা টা রেকি করতে।

১৯৮০ সালের দিকে ইসরাইল তাদের A-4 Skyhawk দিয়া কিছু বিমান আক্রমণ শুরু করে । আপাতত এইটা বিচ্ছিন্ন আক্রমণ মনে হইলেও আসলে ইসরাইল এর উদ্দ্যেশ্য ছিল ইরাক এর এয়ার পাওয়ার কেমন আইডিয়া পাওয়ার জন্য। এই আক্রমণ এ একটা লাভ হইল, ইসরাইলি রা ইরাক এর এয়ার স্পেস এ একটা ব্লাইন্ড স্পট পাইল যেইখানে রাডার ধরতে পারে না। এইটা ছিল সৌদি বর্ডার এর দিকে। যেহেতু সৌদি-ইরাকি ভাই ভাই, তাই ইরাক ওই দিক থেইকা কোন আক্রমণ আসার আশঙ্কা করতেসিল না।

প্ল্যান হইল যে ইসরাইলি বিমান গুলা এই পথে প্রবেশ করবে ইরাকে । কিন্তু সমস্যা হইল আসার আগে তাদের প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার আকাশ পথ পারি দিয়া আস্তে হবে সৌদি আরব আর জর্ডান এর উপর দিয়া যারা কেউ ই তাদের এয়ারস্পেস এ ইসরাইল এর বিমান এলাউ করবে না। এই সমস্যা তারা এত ব্রিলিয়েন্টলি ওভার কাম করসিল যেইটা নিচের সেকশন এ উল্লেখ করলাম।

চূড়ান্ত আক্রমণ:

৭ই জুন, ১৯৮১। স্থানীয় সময় ৩ টা ৫৫ তে ইসরাইল এর ক্যাপচার করা মিশরের Etzion Air Force Base থেইকা আকাশে উড়লো ৮টা F-16 ফাইটার। তাদের এস্কোরট করা জন্য ছিল ছয়টা F-15 বিমান। আর মিশন কন্ট্রোল হিসাবে সারক্ষণ আকাশে ছিল একটা E2C HawkEye. আর ইরাকি বর্ডার এর আশে পাশে সার্চ এন্ড রেস্কিউ টিম হিসাবে ডেপলয় করা হইসিল বেশ কিছু CH-53 Super Stallion হেলিকপ্টার।

প্রথমে তাদের অতিক্রম করতে হইসিল জর্ডান এয়ারস্পেস। F-16 বিমান গুলা তাদের ফরমেশন পালটায়ে সৌদি এয়ার ফোরস যেই ফরমেশন এ যায় সাধারণত সেই ফরমেশন এ চইলা গেল।আর তারা সৌদি একসেন্ট এ জর্ডান এয়ার কন্ট্রোলার এর সাথে কথা বলা শুরু করল। তারা বলল যে তারা একটা সৌদি পেট্রল টিম, হারাইয়া গেসে, এখন তারা সৌদি আরব ফেরত যাইতে চায়, কেমনে কি। তাদের ক্লোজ ফরমেশন এর কারণে রাডার এও তাদের একটা বিমান হিসাবে দেখাইতাসিল। তাই জর্ডান কোন সন্দেহ ই করে নাই।

সোউদি এয়ার স্পেস এ ঢুইকাও তারা সেম টেকনিক ফলো করল। তারা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার কে জর্ডান একসেন্ট এ বললও, তারা জর্ডান এর পেট্রোল টিম,হারাইয়া গেসে, এখন বাসায় যাইতাসে। সোউদি রাও কোন সন্দেহ করে নাই।

একটা মজার জিনিষ হইল, যখন তারা গালফ এরিয়া পার হইতাসিল তখন সেইখানে তারা জর্ডান এর রাজার ইয়াট এর উপর দিয়া যায়। জর্ডান এর রাজা কিং হুসেইন ইয়াট এই ছিলেন। তিনি প্লেনে ইসরাইলি মারকিং আর তাদের হেডিং দেইখা সাথে সাথে বুইঝা ফালাইলেন এরা তো নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর উড়ায় দিতে যাইতাসে। তিনি সাথে সাথে ফোন দিসিলেন কিন্তু সাদ্দাম হোসেন ফোন ধরেন নাই।

তারপর এর অংশ খুবি সহজ ছিল। কোণ রকম বাধা ছাড়াই F-16 গুলা রিয়েক্টর এ আক্রমণ চালায় আর বেশির ভাগ টাই মিশায় দ্যায় একদম মাটির সাথে। অপারেশন শেষে তারা চল্লিশ হাজার ফুট এ উইঠা যায় আর নিরাপদে ফিরা যায় ইসরায়েল এ।

এই অপারেশন কে তার প্ল্যানিং চমক এর কারণে এয়ার রেইড অপারেশন এর ইতিহাসের অন্যতম সফল অপারেশন হিসাবে গণ্য করা হয়।

 

১৫৩/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ৩০, ২০১৫ । ১০.৪৫ পি.এম

 

দিন টা শুরু হইসে আজকে একটা ভাল কাজ দিয়া। ছোট খাট কাজ, কিন্তু ভাল্লাগসে করতে পাইরা। আমি রিকশা থেইকা নামসি বসুন্ধরার গেট এ, রাস্তা পার হবো দাঁড়ায় আসি, তুরাগ বাস থেইকা এক বুড়ি মহিলাকে নামায় দিল সাথে চাইরটা লাগেজ। মনে হয় দেশ থেইকা ফিরতাসে। উনিও রাস্তা পার হবে কিন্তু একলা মানুষ চাইরটা লাগেজ। কেমনে পার হবে? আমি গিয়া বললাম , নানু, আমি পার করায় দেই? নানু এত খুশি হইল। উনি নিল দুইটা ব্যাগ, আমি নিলাম দুইটা ব্যাগ। তারপর হাত দেখায় সব গাড়ি বাস থামায় ফেলসি আর উনারে পার করায় দিসি। ওই পারে রিকশায় উঠায় দিসি, রিকশা ভাড়া দেওয়া টাতে উনি মাইন্ড করতে পারে ভাইবা আর দেই নাই। উনি যাওয়ার আগে আমার মাথায় হাতাইয়া আদর কইরা গেসে। বসুন্ধরার রাস্তা টা এত ঝাপ্সা কইরা যে ক্যান বানাইসে :’)

অফিসে আজকে খাওয়া দাওয়ার দিন আছিল। আমি আর পপি মিলা বস দের থেইকা সালামির টাকা উঠাইসিলাম। সেগুলা দিয়া আজকে পুরা টিম খাওয়া দাওয়া হইসে। কস্তূরীর চিকেন বিরানি। আমার সামনে যেই প্যাকেট টা রাখসিল ওই খানে তখনো কেউ আসে নাই। আমি দেখি আমার রান এর পিস এর পরসে। আই হেইট রান এর পিস। আমি এদিক সেদিক তাকায়া আস্তে কইরা সামনের প্যাকেট এর থেইকা বুকের পিসটা নিয়া আমার রানের পিস টারে ওই প্যাকেট এ আবার পুলাও দিয়া ঢাইকা ঢুইকা চাপা দিয়া থুইয়া দিসি। খুবি লাশ গুম করতাসি টাইপ ফিলিংস হইসে।

আমি Andrew King এর Stars : A Very Short Introduction এর প্রথম চ্যাপ্টার শেষ করসি। মজা পাইতাস পইড়া। কয়েকটা জিনিশ শিখসি। যেমন একটা তারা আমাদের থেইকা দূরে যাইতাসে না কাছে আস্তাসে সেইটা মাপা হয় ডপলার এফেক্ট দিয়া। ডপলার এফেক্ট পরসিলাম ক্লাস সেভেন এ। তরঙ্গের উৎস যখন কাছে আস্তে থাকে তখন তরঙ্গ গুলার দৈর্ঘ ছোট ছোট হয় আর দূরে যাইতে থাকলে বড় বড়। এই জন্য এম্বুলেন্স যত আগায় আস্তে থাকে সাইরেনটারে তত হাই পিচ মনে হয়। এই জিনিশ টারেই বলে ডপলার এফেক্ট। যদি তারা তা থেইকা নির্গত আলো এর তরংগদৈর্ঘ দেখা যায় যে ঘন ঘন হইসে, তইলে ওইটা আমাগো দিকে আস্তাসে। আর উল্টাটা হইলে দূরে যাইতাসে গা।

এই বই এ বলসে একটা এস্ট্রোনমার এর জন্য জরুরি বেসিক জিনিইস হইল তারাডা হাউ হেভি, হাউ হট, হাউ ব্রাইট আর হাউ বিগ? হাউ হেভি এইটা মাপা হয় মাধ্যাকর্ষন শক্তি দিয়া। যেমন সূর্যের ভর মাপা হইসে সব কিছুর উপর সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বিবেচনা কইরা। সূর্যের ভর মাপা একটা ক্লাসিক বিষয়। তাই একটা তারা রে যখন মাপা হয় তখন সেইটা সূর্যের তুলনায় কোটটুক ভারি বা হাক্লা সেইটা মাপা হয়। এইটারে বলে সোলার ম্যাস।

হাউ হট সেইটা মাপা হয় তারা টা থেইকা বিচ্ছ্যুরিত আলো রে স্পেকট্রাম আনালাইজার এর ভিতর দিয়া নিয়া সেইটা এনালাইসিস কইরা। এইডা কইরা দেখা গেসে যে তারার সার্ফেস এর তাপমাত্রা কম থাকে, ভিত্রে বেশি থাকে। আর এইটা আন কমন কিছু না, কয়লার উপরের চেয়ে ভিত্রে বেশি গরম থাকে না , ওই রম।

দিনটা শেষ কড়সিও একটা ছোট ভাল কাজ দিয়া। দুইটা দারোয়ান আসে নিচে , আমারে দেখলি সালাম স্যালুট ইত্যাদি দিতে থাকে। আজকে বাসায় ঢুক্তাসি দেখি একজন সেলুট দিল। তার কাছে গিয়া ব্যাগ থেইকা একটা সেভেন আপ এর বোতল বাইর কইরা তারে ধরায় দিলাম। কইলাম ন্যান সেভেনাপ খান। সে খুবি ভেবা চেকা খাইয়া গেল, আর বলল, না না স্যার, আমি তো সেভেনাপ খাই না। আমি ব্যাগ থেইকা আরেকটা বোতল দিয়া বললাম, তাইলে পেপসি খান। ছেলেটা হাস্তেসিল আর আমি মাটির দিকে তাকায়া আস্তে আস্তে আইসা পরসি বাসায়।

 

 

 

১৫২/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ২৯, ২০১৫ । ১০.৫৫ পি.এম

 

ওই দিন যে বাতিঘর থিকা এত্তডি বই কিনলাম তার মধ্যে একটা বই পড়া শুরু করসি। বই এর নাম Stars : A Very Short Introduction। বই ডা লিখসেন জনাব Andrew King আর বইডা প্রকাশ করসে Oxford University Press. বই ডার দাম চাইরশ চল্লিশ টাকা। এই খানে স্টার মানে টেলিভিশন/সিনেমা/ফেসবুক এর তারকা না। এই স্টার মানে নক্ষত্র।

আহা নক্ষত্র। যারা কবিতা ভালবাসে অথবা প্রেম এ পইড়া হাড্ডি গুড্ডি ভাঙ্গে, তাদের সবার ই মনে হয় একটা জীবনানন্দ ফেইজ যায়। আমারো গেসিল। রাইত দিন খালি জীবনানন্দ পরতাম আর নক্ষত্র লয়া ফেসিনেশন করতাম। আইকন্স এর লিরিক্স লেখার সময় একটা গান এ লিখসিও “মানুষের মত নয়, নক্ষত্রের মত হতে হয়”। এস্ট্রোলজি বা রাশিফল ইন্টারেস্টিং কিন্তু এস্ট্রোনমি আর এর ইতিহাস এত টানতো আমারে। এখন অনেক ক্যাম্প ট্যাম্প হয়। ছোটবেলায় আমি জানতামি না বাংলাদেশ এস্ট্রোনোমিকাল এসোসিয়েশন বইলা একটা সংগঠন আসে। আর ইচ্ছা করলে এইটার মেম্বার হয়া নক্ষত্র সম্পর্কে জানাও যায়। স্কুলে পড়ার সময় ই এইটা সম্বব। অথচ আমি এমন একটা স্কুল এ পড়সি যেই খানে লাইব্রেরি সারা বছর তালা বন্ধ থাকতো ,শুধু বাৎসরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার রুম হিসাবে ব্যবহার হওয়ার সময় সেইখানে ঢুকার সুযোগ পাইতাম। তাও ঢুইকা অনেক সাহস কইরা যদি বই এর আলমারি গুলার মধ্যে হারায় যাইতাম তখন দেখতাম তাক ভর্তি খালি ষাইখুল হাদিস, মুক্তির আলো , মক্সেদুল মুমেনিন টাইপ এর বই। সরকারি অনুদানে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের দেওয়া যেসব বই পাওয়া যাইত সেগুলা আমাদের কখনো দেখতেও দেওয়া হইত না। অগুলা পরা “হারাম” ছিল। কারো তাতে কোনদিন কোন প্রব্লেম হয় নাই, কেউ কোনদিন প্রতিবাদও করে নাই। বেতের বাড়ী খাইয়া হাসপাতাল এ যাইতে কে চায়। একটা নিজের ভেতর জড়সড় থাকা ভিতু কুকুর হয়া পার করসিলাম স্কুল জীবন।

কি লাইন এ লেখা শুরু করসিলাম আর ট্রেন কই গেসে গা। দুরু। লাইন এ আসি। আমার স্বভাব হইল আমি নতুন বই হাতে নিলে তার এক্কেরে সব পরি। কাভার এ পিছে প্রকাশকের নাম ধাম দাম থেইকা শুরু কইরা শেষে এপেন্ডিক্স এর শেষ শব্দ পর্যন্ত। যেমুন এই বই এর শুরু তে পইড়া জীবনে পরথম জানতে পারলাম যে Oxford University Press এর Very Short Introduction সিরিজের প্রায় ৩০০ এর মত বই আসে বিভিন্ন টপিক এ । কি জোস !

Stars : A Very Short Introduction বই এর ভূমিকায় Andrew King লিখসেন, এই বই পড়তে এক্কেরে বিজ্ঞান এর ছাত্র হোইতে হইব এমন কোন কথা নাই। উনি মজা কইরা কইসেন, যারা “Physics/Astronomy for Poets” কোর্স নিতাসেন তাদের এই বই কাজে লাগবে অনেক। আর ভূমিকার লাস্টে কইসেন, এই বই এর কিছু অংশ Leicestershire এ বয়া বয়া লিখসেন আর কিছু অংশ Amsterdam এ বয়া বয়া লিখসেন। এই জন্য তিনি Nicole নামে কারে জানি ধইন্যবাদ দিসেন তারে দুই জায়গাতেই At Home ফিল করানোর জন্য। Nicole আপা ক্যাডা আলায় জানে।

এই বই এর পরথম সেপ্টার এর নাম Science and The Stars। এই সেপ্টার পইড়া আমি জানতে পারসি Auguste Comte নামে এক বেডা, যারে কিনা Sociology er ফাউন্ডার বলা হয়, ব্রাজিল এর ফ্ল্যাগ এ যার দেওয়া শব্দ লেখা আছে, উনি ১৮৩৫ সালে কইসিলেন,

“এহ, কইলেই হইল, আকাশের তারাদের কেমিকেল কম্পোজিশন কি তা আমাদের পক্ষে জানা জীবনেও সম্ভব না”

“There is no conceivable means by which we shall one day determine the chemical composition of the stars”

কিন্তু উনার মারা যাওয়ার কয়েক বছর এর মধ্যেই, ১৮৫৭ সালে বিজ্ঞান প্রমান করে যে উনি যা কইসিলেন ভুল কইসিলেন। যাক ভালইসে। ব্যাডায় মরার পরে ভুল প্রমাণিত হইলেই কি আর না হইলেই কি। কাম যা সারার ত সাইরাই লাইসে।

কেমনে ভুল প্রমাণিত হইল সেই ব্যাপারে যদিও এট্টু জটিল কইরা লেখসে লেখক। তবু আমি পইড়া যা বুঝসি তা আমার বেকুব মাথার মত সুজা কইরা লেখার চেষ্টা করি।

আমরা কেমনে একতা তারারে না ধইরা না গিয়া তার সব কিছু জাইন্যা লামু? তারার ত আর ফেসবুক নাই যে সকাল বেলা উইঠা পোস্ট দিব যে আমার উজন এত কেজি, ফিলিং ফ্যাট। তাই দূর থেইকাই নক্ষত্রের নারী নক্ষত্র বাইর করনের একটা তরিকা দরকার ছিল। দুনিয়ারে এই তরিকা বাইর কইরা দিলেন দুই জার্মান ফিজিসিস্ট, Gustav Kirchhoff আর Robert Bunsen. হ, ইনিই সেই বুন্সেন যার বানানো বুন্সেন ল্যাম্প এখনো দুনিয়ার সকল কেমিস্ট্রি ল্যাব এ ব্যবহার হয়।

এই দুইজন করলেন কি Joseph Von Fraunhofer এর একটা থিউরি রে কাজে লাগায়া যে কোন জিনিশ থেইকা বাইর হওয়া আলো এনালাইসিস করার একটা যন্ত্র বানাইলেন যার নাম Spectrograph. ১৭শ শতাব্দীর মরহুম Joseph Von Fraunhofer তার গবেষণায় দেখায় গেসেন যে, সূর্যের আলোরে প্রিজম এর ভিত্রে দিয়া পাস করলে যেই রঙ এর বিভাজন পাওয়া যায় তারে আরো গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করলে কালা কালা কিছু লাইন দেখা যায়। আর দুনিয়ার যে জায়গা থেইকাই এই এনালাইসিস করা হউক না কেন সব সময় এই কালা কালা লাইন এর প্যাটার্ন টা একি থাকে। মানে একি দূরত্ব, একি পার্থক্য পাশা পাশী লাইন এর মধ্যে এমন।

কারশফ আর বুন্সেন বাইয়া রিচার্স কইরা দেখলেন গরম জিনিশের থন যেই তরঙ্গ বাইরয় হেডির এরম প্যাটার্ন এনালাইসিস করলে সাদা সাদা লাইন দেখা যায় আর ঠাণ্ডা জিনিষের জন্য কালা কালা লাইন। তার মানে উনারা বুঝতে পারলেন একটা গরম জিনিশ যখন তরঙ্গ বিকিরণ করে তখন সাদা সাদা লাইন হয় আর যখন জিনিষটা ঠাণ্ডা, মানে সে পরিবেশ থেইকা তাপ গ্রহণ কইরা রুম টেম্পারেচার এ আইতে চাইসে, তখন সাদা লাইনের জায়গায় কালা কালা লাইন দেখা যায়।

এই সাদা লাইন আর কালা লাইন গুলারে বলে Emission Lines আর Absorption Lines.

যে কোণ একটা পদার্থের এই সাদা লাইন/কালা লাইন এর প্যাটার্ন একি। তাই এই প্যাটার্ন দেইখা বাইর করন যায় এইটাতে কি আসে আসলে। যেমন অমুক নুডুলস পুড়াইলে আর তার স্পেক্টার্ম এনালাইসিস করলে সেই প্যাটার্ন হয়, সেইটা যদি শিশার লগে মিলে, তাইলে অই নুডুলস এ অবশ্যই শিশা আসে। তারা করতো কি, এই প্যাটার্ন গুলা রেকর্ড কইরা থুইত। আর টেলিস্কোপ এর লগে তাগো স্পেক্ট্রমিটার লাগাইয়া প্রমান কইরা দেখাইস্ল যে সূর্যে কি কি আছে। অন্য তারায় কি কি আছে।

এমনেই তারার দেশে গিয়া, কোদাল দিয়া কোপাইয়া তারার মাডি আইন্যা তারপর এনালাইসিস না কইরা খালি তারা থেইকা বাইর হওয়া আলো এনালাইসিস কইরা মানুষ বুইঝা ফালাইল তারা কিদ্দিয়া বানাইছে আল্লায়।

এদ্দুরি পরসি। পেজ এইট। এখনও শেষ হয় নাই পড়া, অনেক অনেক বাকি। তয় এখন পর্যন্ত যদ্দুর পড়সি তারমধ্যে সবচেয়ে সুন্দর লাইন হইল,

“Every Atom in our bodies was once part of a star”

 

 

১৫১/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ২৮, ২০১৫ । ৯.০০ পি.এম

 

আমার যখন ঘুম আসে আর আমি জানি যে এখন ঘুমান যাবে না, কাজ আসে, কাজ শেষ কইরা ঘুমাইতে হবে, তখন আমার নিজেরে জোম্বি জোম্বি লাগে। আজকে মনে হয় যে কোন সময় ঘুমায় যাবো। তাই এই দিন এর আলো থাকতেই নোট লিখতে বইসা পরসি।

ঘুম ঘুম লাগার কারন হইল গতকাল ফেরদুইচ্চার বিয়া শেষ কইরা অগোরে বাসর ঘরে পৌছায় দিয়া বিদায় মিদায় নিয়া হোটেল রুমে আইতে আইতে বাজসে রাইত ৩ টা। আমাদের ফ্লাইট ছিল সকাল ৭ টায়। কথা ছিল যেই গাড়ি ঠিক করা হইসে সেইটা আমারে আর ইহাব রে পিক করবে জি ই সি মোড় থেইকা ভোর ৫ টায়। তারপর ইশতিয়াক রে পিক করতে হবে আগ্রাবাদ থেইকা। তারপর আমরা এয়ারপোর্ট যাবো। আমাদের বিমান থেইকা ফোন কইরা জানাইল যে ফ্লাইট ডিলে হবে। নতুন টাইম ৭.৪৫।

আমরা জানতাম যে এখন ঘুমাইলে পাঁচ টা বাজে উঠা একটা চেলেঞ্জিং ব্যাপার হবে। তাই আমরা মাল্টিপল ব্যাকআপ আলার্ম সিস্টেম প্ল্যান করসি। আমি এলার্ম দিসি, ইহাব এলার্ম দিসে , হোটেলের রিসিপ্সহনে ফুন্দিয়া কইসি, শুনেন আমাদের পাঁচ টা বাজে ডাক দিবেন। তারপর বিছানায় শইল্ডা মেইল্লা দিয়া চোখ বুঞ্ঝনের আগেই ঘুমাইয়া গেসি কহন কইতারি না।

ভুর পাঁচটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে আমার ঘুম ভাইঙ্গা গেসে আর আমি বইসা বইসা ওয়েট করসি এলার্ম গুলার। সব বাইজা বুইজা আর কল আইসা শেষ হওয়ার পরে আমি খুবি *ড্রাম্ররোল* তারাআআআ আমি ফার্স্ট টাইপ ভাব কইরা উইঠা গেসি ঘুম থেইকা। এয়ারফুট পর্যন্ত আস্তে কুন সমস্যা হয় নাই।

এয়ারফুট আইসা হুনি আমগো বিমান আর লেট হইব। নতুন টাইম ১০.১৫। টাইম কাটানির লাইগা আমি আর ইহাব চিটাগাং এয়ারপোর্ট এর দোতালায় উঠসিলাম। ওই খানে একটা ভিউইং ডেক আসে। ৫০ টাকা কইরা টিকিট।

ভাবসিলাম আহা কত না জানি সুন্দর ভিউ হইব। পেলেনের ফডুক তুলুম। কিন্তু লুকজন বেশি বুঝে তো তাই সামনে জালি টাইপ এর ফেন্স দিয়া রাখসে। জালির ফাঁক দিয়া পেলেনের ছবি তুলন এর ট্রাই করলাম কিন্তু সুবিধা করতারি নাই। কুনা কাঞ্চি দিয়া আয়া পরে লুহার জালি তার।

একটু পরে এক আনসার ভাই আইসা বলসে, “এই খানে ক্যামেরা মারা নিষেধ” । আমিও লখখি প্লেন স্পটার এর মত বলসি, আচ্ছা আর ক্যামেরা মারবো না। অবশ্য মারার মত কিছু ছিল ও না 😛 আই মিন ছবি তোলার মত আরকি। একটা খালি বিমান এর 777-200, S2-AHK দাঁড়ায় ছিল।

এয়ারপোর্ট এ লরার তিনটা বান্ধুবির সাথে দেখা হইসিল। আর্কিটেক্ট সবাই। ওরা একটা পরটার দোকান খুইজা বাইর করসিল। ইহাব আর আমি ওই খানে গেলাম। পরটা দিয়া ডিম্বাজি খাইসি 😀 এই তথ্য না দিলে তো দেশ ও জাতি কে উদ্ধার করাই হইতাসিল না।

এরপর খুবি ফাস্ট ফরোয়ার্ড দিন। বিমান উড়ল, নামলো, ঢাকায় আসলাম, অফিসে ঢুকলাম, ঘুমে চোখ বার বার বন্ধ হয়া গেল, বিকালের রোদ থাকতে থাকতে সুভাস্তু বাসায় আইসা পড়লাম। এখন বেশ উৎসবের পর এর স্ট্রেসড আউট ফিলিংস টা হইতাসে।

এতদিন যেমনেই হউক নেগেটিভ এনার্জি গুলারে ব্যাকপেকে ভইরা পিছে নিয়া ঘুরাঘুরি করতে পারসি। কিন্তু ঢাকায় পা রাখার পর মনে হইতাসে সবাই এবং সবকিছু চাইপা ধরতাসে চারপাশ দিয়া। ঘুম কম হইসে এই কারনেও হইতে পারে মে বি। আজকে আর কোন লাইট জালাই নাই বাসায়। অন্ধকার ভাল্লাগতাসে। ফোন আসছে কয়েকটা বুঝতে পারসি কিন্তু ধরতে ইচ্ছা করতাসে না একটুও। এরকম ই থাক। ঘুম দেই।

ঘুমের বেস্ট দিক হইল, ঘুম প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও , প্রশ্ন গুলারেই ভুলায় দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।