১৫২/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ২৯, ২০১৫ । ১০.৫৫ পি.এম

 

ওই দিন যে বাতিঘর থিকা এত্তডি বই কিনলাম তার মধ্যে একটা বই পড়া শুরু করসি। বই এর নাম Stars : A Very Short Introduction। বই ডা লিখসেন জনাব Andrew King আর বইডা প্রকাশ করসে Oxford University Press. বই ডার দাম চাইরশ চল্লিশ টাকা। এই খানে স্টার মানে টেলিভিশন/সিনেমা/ফেসবুক এর তারকা না। এই স্টার মানে নক্ষত্র।

আহা নক্ষত্র। যারা কবিতা ভালবাসে অথবা প্রেম এ পইড়া হাড্ডি গুড্ডি ভাঙ্গে, তাদের সবার ই মনে হয় একটা জীবনানন্দ ফেইজ যায়। আমারো গেসিল। রাইত দিন খালি জীবনানন্দ পরতাম আর নক্ষত্র লয়া ফেসিনেশন করতাম। আইকন্স এর লিরিক্স লেখার সময় একটা গান এ লিখসিও “মানুষের মত নয়, নক্ষত্রের মত হতে হয়”। এস্ট্রোলজি বা রাশিফল ইন্টারেস্টিং কিন্তু এস্ট্রোনমি আর এর ইতিহাস এত টানতো আমারে। এখন অনেক ক্যাম্প ট্যাম্প হয়। ছোটবেলায় আমি জানতামি না বাংলাদেশ এস্ট্রোনোমিকাল এসোসিয়েশন বইলা একটা সংগঠন আসে। আর ইচ্ছা করলে এইটার মেম্বার হয়া নক্ষত্র সম্পর্কে জানাও যায়। স্কুলে পড়ার সময় ই এইটা সম্বব। অথচ আমি এমন একটা স্কুল এ পড়সি যেই খানে লাইব্রেরি সারা বছর তালা বন্ধ থাকতো ,শুধু বাৎসরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার রুম হিসাবে ব্যবহার হওয়ার সময় সেইখানে ঢুকার সুযোগ পাইতাম। তাও ঢুইকা অনেক সাহস কইরা যদি বই এর আলমারি গুলার মধ্যে হারায় যাইতাম তখন দেখতাম তাক ভর্তি খালি ষাইখুল হাদিস, মুক্তির আলো , মক্সেদুল মুমেনিন টাইপ এর বই। সরকারি অনুদানে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের দেওয়া যেসব বই পাওয়া যাইত সেগুলা আমাদের কখনো দেখতেও দেওয়া হইত না। অগুলা পরা “হারাম” ছিল। কারো তাতে কোনদিন কোন প্রব্লেম হয় নাই, কেউ কোনদিন প্রতিবাদও করে নাই। বেতের বাড়ী খাইয়া হাসপাতাল এ যাইতে কে চায়। একটা নিজের ভেতর জড়সড় থাকা ভিতু কুকুর হয়া পার করসিলাম স্কুল জীবন।

কি লাইন এ লেখা শুরু করসিলাম আর ট্রেন কই গেসে গা। দুরু। লাইন এ আসি। আমার স্বভাব হইল আমি নতুন বই হাতে নিলে তার এক্কেরে সব পরি। কাভার এ পিছে প্রকাশকের নাম ধাম দাম থেইকা শুরু কইরা শেষে এপেন্ডিক্স এর শেষ শব্দ পর্যন্ত। যেমুন এই বই এর শুরু তে পইড়া জীবনে পরথম জানতে পারলাম যে Oxford University Press এর Very Short Introduction সিরিজের প্রায় ৩০০ এর মত বই আসে বিভিন্ন টপিক এ । কি জোস !

Stars : A Very Short Introduction বই এর ভূমিকায় Andrew King লিখসেন, এই বই পড়তে এক্কেরে বিজ্ঞান এর ছাত্র হোইতে হইব এমন কোন কথা নাই। উনি মজা কইরা কইসেন, যারা “Physics/Astronomy for Poets” কোর্স নিতাসেন তাদের এই বই কাজে লাগবে অনেক। আর ভূমিকার লাস্টে কইসেন, এই বই এর কিছু অংশ Leicestershire এ বয়া বয়া লিখসেন আর কিছু অংশ Amsterdam এ বয়া বয়া লিখসেন। এই জন্য তিনি Nicole নামে কারে জানি ধইন্যবাদ দিসেন তারে দুই জায়গাতেই At Home ফিল করানোর জন্য। Nicole আপা ক্যাডা আলায় জানে।

এই বই এর পরথম সেপ্টার এর নাম Science and The Stars। এই সেপ্টার পইড়া আমি জানতে পারসি Auguste Comte নামে এক বেডা, যারে কিনা Sociology er ফাউন্ডার বলা হয়, ব্রাজিল এর ফ্ল্যাগ এ যার দেওয়া শব্দ লেখা আছে, উনি ১৮৩৫ সালে কইসিলেন,

“এহ, কইলেই হইল, আকাশের তারাদের কেমিকেল কম্পোজিশন কি তা আমাদের পক্ষে জানা জীবনেও সম্ভব না”

“There is no conceivable means by which we shall one day determine the chemical composition of the stars”

কিন্তু উনার মারা যাওয়ার কয়েক বছর এর মধ্যেই, ১৮৫৭ সালে বিজ্ঞান প্রমান করে যে উনি যা কইসিলেন ভুল কইসিলেন। যাক ভালইসে। ব্যাডায় মরার পরে ভুল প্রমাণিত হইলেই কি আর না হইলেই কি। কাম যা সারার ত সাইরাই লাইসে।

কেমনে ভুল প্রমাণিত হইল সেই ব্যাপারে যদিও এট্টু জটিল কইরা লেখসে লেখক। তবু আমি পইড়া যা বুঝসি তা আমার বেকুব মাথার মত সুজা কইরা লেখার চেষ্টা করি।

আমরা কেমনে একতা তারারে না ধইরা না গিয়া তার সব কিছু জাইন্যা লামু? তারার ত আর ফেসবুক নাই যে সকাল বেলা উইঠা পোস্ট দিব যে আমার উজন এত কেজি, ফিলিং ফ্যাট। তাই দূর থেইকাই নক্ষত্রের নারী নক্ষত্র বাইর করনের একটা তরিকা দরকার ছিল। দুনিয়ারে এই তরিকা বাইর কইরা দিলেন দুই জার্মান ফিজিসিস্ট, Gustav Kirchhoff আর Robert Bunsen. হ, ইনিই সেই বুন্সেন যার বানানো বুন্সেন ল্যাম্প এখনো দুনিয়ার সকল কেমিস্ট্রি ল্যাব এ ব্যবহার হয়।

এই দুইজন করলেন কি Joseph Von Fraunhofer এর একটা থিউরি রে কাজে লাগায়া যে কোন জিনিশ থেইকা বাইর হওয়া আলো এনালাইসিস করার একটা যন্ত্র বানাইলেন যার নাম Spectrograph. ১৭শ শতাব্দীর মরহুম Joseph Von Fraunhofer তার গবেষণায় দেখায় গেসেন যে, সূর্যের আলোরে প্রিজম এর ভিত্রে দিয়া পাস করলে যেই রঙ এর বিভাজন পাওয়া যায় তারে আরো গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করলে কালা কালা কিছু লাইন দেখা যায়। আর দুনিয়ার যে জায়গা থেইকাই এই এনালাইসিস করা হউক না কেন সব সময় এই কালা কালা লাইন এর প্যাটার্ন টা একি থাকে। মানে একি দূরত্ব, একি পার্থক্য পাশা পাশী লাইন এর মধ্যে এমন।

কারশফ আর বুন্সেন বাইয়া রিচার্স কইরা দেখলেন গরম জিনিশের থন যেই তরঙ্গ বাইরয় হেডির এরম প্যাটার্ন এনালাইসিস করলে সাদা সাদা লাইন দেখা যায় আর ঠাণ্ডা জিনিষের জন্য কালা কালা লাইন। তার মানে উনারা বুঝতে পারলেন একটা গরম জিনিশ যখন তরঙ্গ বিকিরণ করে তখন সাদা সাদা লাইন হয় আর যখন জিনিষটা ঠাণ্ডা, মানে সে পরিবেশ থেইকা তাপ গ্রহণ কইরা রুম টেম্পারেচার এ আইতে চাইসে, তখন সাদা লাইনের জায়গায় কালা কালা লাইন দেখা যায়।

এই সাদা লাইন আর কালা লাইন গুলারে বলে Emission Lines আর Absorption Lines.

যে কোণ একটা পদার্থের এই সাদা লাইন/কালা লাইন এর প্যাটার্ন একি। তাই এই প্যাটার্ন দেইখা বাইর করন যায় এইটাতে কি আসে আসলে। যেমন অমুক নুডুলস পুড়াইলে আর তার স্পেক্টার্ম এনালাইসিস করলে সেই প্যাটার্ন হয়, সেইটা যদি শিশার লগে মিলে, তাইলে অই নুডুলস এ অবশ্যই শিশা আসে। তারা করতো কি, এই প্যাটার্ন গুলা রেকর্ড কইরা থুইত। আর টেলিস্কোপ এর লগে তাগো স্পেক্ট্রমিটার লাগাইয়া প্রমান কইরা দেখাইস্ল যে সূর্যে কি কি আছে। অন্য তারায় কি কি আছে।

এমনেই তারার দেশে গিয়া, কোদাল দিয়া কোপাইয়া তারার মাডি আইন্যা তারপর এনালাইসিস না কইরা খালি তারা থেইকা বাইর হওয়া আলো এনালাইসিস কইরা মানুষ বুইঝা ফালাইল তারা কিদ্দিয়া বানাইছে আল্লায়।

এদ্দুরি পরসি। পেজ এইট। এখনও শেষ হয় নাই পড়া, অনেক অনেক বাকি। তয় এখন পর্যন্ত যদ্দুর পড়সি তারমধ্যে সবচেয়ে সুন্দর লাইন হইল,

“Every Atom in our bodies was once part of a star”

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *