১২৮/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুলাই ৫, ২০১৫ । ১০.৫১ পি.এম

 

পাঠশালায় পড়ার সময় ডকুমেন্টরি ফটোগ্রাফি ক্লাস এ আমাকে সুমন ভাই একটা এসাইন্মেন্ট দিসিলেন। বিষয় “কনজিউমারিজম”। এই বিষয়ে একটা লেখা জমা দিতে হবে যে কনজিউমারিজম বলতে আমি কি বুঝি আর বারো টা ছবির একটা ফটো এসে জমা দিতে হবে যা দেইখা বুঝা যাবে ও আচ্ছা আচ্ছা বুঝতে পারসি ফটোগ্রাফার কি বুঝসে কনজিউমারিজম নিয়া।

আমি জীবনে ওই প্রথম বার Consumerism শব্দটা শুনি। কি আজিব শব্দ রে বাবা । মনে হয় ঢং কইরা কাস্টমার রে কনজিউমার কইতাসে আর লগে একটা ইজম লাগায় দিসে বেপারটা রে আরো কডিন বানানির লাইগা। ক্যান এইডারে নাম কনজিউমারিজম? ক্যান কাস্টমারিজম না? ব্যাপার টা আসলে কি? এইডা তো আগে বুঝতে হইব। নাইলে লিখুম কি। আর ভিজুয়াল চিন্তা করুম কি। আর ছবি তুলুম কি।

টেনশন এ আমার যা হয়, আমি ডিপ্রেসড হয়া গেলাম। ফেরদৌস অনেক বুঝায় সুঝায় লাইন এ রাখলো। অন্য সবার থেইকা আমার পাঠশালার লাইফ টা একটু আলাদা ছিল। সবাই রাতের বেলা চিন্তা করত, দিনের বেলা ছবি তুলত। আমি ৫টা পর্যন্ত অফিস কইরা পাঠশালায় দৌড়াইতাম সপ্তাহে ৩ দিন। রাত ১০ টা পর্যন্ত ক্লাস কইরা আবার ফেরত আইতাম বাসাবো নাইলে বসুন্ধরা। বাকি ৩ দিন অফিসের পর ছবি তুলতে বাইর হইতাম সন্ধ্যা বেলা। একটা Canon 450D ক্যামেরা আর একটা 18-55 লেন্স। তাও আবার 18 mm এ টেপ মাইরা আটকানো। কারন এসাইন্মেন্ট এর নিয়ম ছিল সব ছবি একটা ফোকাল লেংথ এ তুলতে হবে। আমি 18 mm বাইছা নিসিলাম। ISO 800 এর বেশি তূলা মানে সুইসাইড করা। তাই হাত অনেক স্টেবল কইরা তুলতে হইত ফটো। আল্লাহর রহমতে অই প্র্যাকটিস টার কারণে এখন আমার হাত 1/10 পর্যন্ত স্টেবল থাকে। অবশ্য আরো কিছু টেকনিক আছে হাত স্টেবল করার। কিন্তু সেইটা অন্য ডিসকাশন। কনজিউমারিজম এ ফেরত আসি।

এসাইন্মেন্ট এর ডিপ্রেশন কাটাইতে রিসার্চ এর কোন বিকল্প নাই। তাই কনজিউমারিজম নিয়া রিসার্চ শুরু করলাম। পড়তে পড়তে মাথা মুথা গিট্টু লাইগা গেল। এই একটা কনসেপ্ট এর যে কত রকম এর সংজ্ঞা আছে। থ্যাঙ্ক গড যে সুমন ভাই এসাইন্মেন্ট দিসিল যে কনজিউমারিজম বলতে আমি কি বুঝি? নট ডেফিনেশন কি বলে।

কনজিউমারিজম বলতে আমি যেইটা বুঝসি সেইটা হইল মানুষের চাহিদা কে পুঁজি কইরা মানুষের অজান্তেই মানুষ কে উচ্চ মাত্রায় ভোগ এর দিকে নিয়া যাওয়ার নাম কনজিউমারিজম। এইখানে মানুষ মনে করে তার জীবন যাত্রার উন্নতির জন্য তার এইটা লাগবেই। যেমন কনজিউমারিজম আমাদের শিখায় খালি দুধ খাইলে হইব না, দুধ এর শক্তি বাড়াইতে হরলিক্স খাইতে হইব (যদিও আমার মনে হইসে, গরুরে হরলিক্স খাওয়ায় দিলেই তো হয়)। তারপর আবার এল সি ডি টিভি ই যেখানে আমরা ঠিক মত ভোগ কইরা শেষ করতে পারি নাই সেখানে এল ই ডি , থ্রিডি, ইন্টারনেট ওয়ালা টিভি আইসা পরসে। দ্যাটস কনজিউমারিজম। কনজিউমারিজম এ জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যক না এরকম অনেক জিনিষ আমাদের মাথায় এমন ভাবে ঢুকায় দেওয়া হয় যে আমাদের মনে হয় এইটা ছাড়া আমরা এতদিন কেমনে থাকসি?

কনজিউমারিজম এর শুরু টা হইসিল আসলে অন্য রকম ভাবে। পুঁজিবাদ বা ক্যাপিটালিজম এর মুল কথা হইল, যেমনেই হউক, লাভ করতে হইব আর বেশি কইরা করতে হইব। এই লাভ বারানির জন্য যা যা করন দরকার সব করতে হইব। সাবান দিয়াই আমাদের চলতাসিল, হঠাত আইলও হালাল সাবান আর মার্কেট এ তোলপাড় পইড়া গেল। কালা হউনের আফসুস এর পুঁজি কইরা আমাদের দেখানো হইল কিরিম মাইখা লুকজন ফরসা হয়া যাইতাসে, বডি স্প্রে মাইখা মাইয়া পটাইয়া লাইতাসে, এই ডিটারজেন্ট মাইখা কাপড় ধুইলে ডাস্টবিন এ থাকলেও শইল্লে গন্ধ হয় না ইত্যাদি ইত্যাদি।

পুঁজিবাদী সমাজ দেখলো তার যদি কনজিউমার রে দেখায় তারা কনজিউমার এর খুব কেয়ার করে, তাগো চিন্তায় ওগো রাইতে ঘুম ই হয়না, তাইলে কনজিউমার রা তাদের আরো বেশি ট্রাস্ট করবে। আর ওয়ান্স ইউ উইন দা ট্রাস্ট, অদের যা ইচ্ছা গিলানো যায়। তাই এই সব কোম্পানির প্রত্যক্ষ মদদে শুরু হইল কনজিউমারিজম মুভমেন্ট। ভোঁটকা অধিকার থুক্কু ভোক্তা অধিকার, আই এস ও স্ট্যান্ডার্ড এ প্রস্তুতক্রত মালালাল, ডেন্টাল এসোসিয়েশন দারা স্বীকৃত এই সব ভককর চককর। কনজিউমার রা ভাবল উই আর ইন সেফ হ্যান্ড আর তাদের কনজামশন এর পরিমাণ বারলো আর কনজিউমারিজম এর সংজ্ঞাই পালটাইয়া হয়া গেল the selfish and frivolous collecting of products [সংজ্ঞার সূত্রঃ https://en.wikipedia.org/wiki/Consumerism]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *