১২২/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুন ২৯, ২০১৫ । ১১.১৪ পি.এম

বৌমা থেকে বৈমানিক

 

[ এই লেখা টা যখন লিখছি তখনো সাগরে নিখোঁজ পাইলট তাহমিদ কে খুঁজে পাওয়া যায় নি। আজকের মত রেস্কিউ অপারেশন শেষ, কালকে আবার খোজা হবে ]

 

আমি একটা সিরিজ লেখা শুরু করসিলাম। “উড়তে শেখা”। বাংলা ভাষায় (টু বি স্পেসিফিক আমার মত কইরা লেখা ভাষায়) এভিয়েশন এর ইতিহাস। চার পর্ব পর্যন্ত লিখসি। আরো লেখার ইচ্ছা আসে সামনে। আপাতত পড়ালেখা চলতাসে। ওই খানে ম্যারি এলিজাবেথ থিবল নামে এক জন নারীর কথা বলসিলাম। পৃথিবীর প্রথম নারী যিনি উড়েছিলেন, বেলুনের সাহায্যে।  দুই তিন দিন ধইরা মনে হইতেসিল, পৃথিবী তো অনেক বড় ডোমেইন, আচ্ছা এই দেশে কে উড়েছিল প্রথম? কিংবা আরেকটু বড় স্কেল এ যদি যাই, এই উপমহাদেশে কে উড়েছিল প্রথম?

 

সেইটা নিয়া পড়তে গিয়া যা মনি মুক্তা পাইসি, তারই একটা মনি মুক্তা বা “একজন” মুক্তা আজকের লেখার অনুপ্রেরণা।

 

আজ একটা ডানাবাদি মেয়ের গল্প বলি। তার নাম সারলা ঠাকরাল (মতি)। উনি ভারতীয় উপমহাদেশ এর প্রথম মহিলা পাইলট । তার জন্ম হয় ১৯১৪ সালে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয় পি.ডি.শর্মা নামে একজন এর সাথে। পি.ডি.শর্মার বাবা তার বৌমা সারলা কে অন্য সবার মত দেখেন নাই। তাদের পরিবারে অলরেডি ৯ জন পাইলট ছিল। তিনি ভাবলেন, আমার বৌমা চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকবে না। আমার বৌমা হবে সুপার বৌমা। আমার বৌমা, বৈমানিক হবে। পি.ডি.শর্মার বাবা অর্থাৎ সারলার শ্বশুর সারলা কে ফ্লাইং স্কুল এ ভর্তি করে দিলেন।

 

১৯৩৬ সাল। লাহোর এয়ারপোর্ট। লাহোর ফ্লাইং ক্লাব এর একটা Gypsy Moth বিমান এর চাকা স্পর্শ করলো রানওয়ে। পাইলট লাইসেন্স পাবার সর্বশেষ ধাপ Solo Flying শেষ করে নেমে এলেন একজন বৈমানিক। চোখে মুখে তার আকাশ জয়ের আনন্দ। পরনে শাড়ি, ব্লাউজ, হাতে চুড়ি, গলায় মঙ্গলসূত্র আর মাথায় এভিয়েশন সানগ্লাস আর ক্যাপ। হাসি হাসি লজ্জা লজ্জা মুখে প্রিয় Gypsy Moth এর সামনে হেলান দিয়ে পোজ দিলেন সামনের বক্স ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়ানো ফটোগ্রাফার এর সামনে। ইতিহাসবন্দি হল ভারতীয় উপমহাদেশ এর প্রথম মহিলা পাইলট, সারলা ঠাকরাল। তার বয়স তখন ২১ বছর বয়স আর তার ছোট্ট চার বছর বয়সের মেয়ে আছে, মাকে নিয়ে যার গর্বের শেষ ছিল না।

 

 

সারলা ঠাকরাল তারপর আরো ফ্লাইং চালিয়ে যান এবং Gypsy Moth এ ১০০০ ঘণ্টার ফ্লাইং আওয়ার সম্পন্ন করেন যে কারণে তাকে ‘গ্রুপ A’ লাইসেন্স দেয়া হয়। গ্রুপ A লাইসেন্স এখনকার দিনের প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স (পি পি এল) এর সমতুল্য একটি লাইসেন্স। তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় যিনি এয়ার মেইল পাইলট লাইসেন্স পেয়েছিলেন এবং তিনি করাচী আর লাহোর এর মধ্যে নিয়মিত ফ্লাই করতেন।

 

১৯৩৯ সাল। সারলা ঠাকরাল চেয়েছিলেন কমার্শিয়াল পাইলট হইতে। তার জন্য তার দরকার ছিল “গ্রুপ B”  লাইসেন্স। তিনি তাই ভারতের যোধপুরে কমার্শিয়াল পাইলট ট্রেইনিং ও শুরু করেন। কিন্তু ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় বলে ইংরেজ সরকার সকল সিভিল ট্রেইনিং স্থগিত ঘোষণা করে। ফলে উনার কমার্শিয়াল পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ও আপাতত স্থগিত হয়া যায়।

 

ভাগ্য এমনি খারাপ, এই বছরই সারলা ঠাকরাল এর স্বামী পি.ডি.শর্মা এক দুর্ঘটনায় মারা যান। শোকাহত সারলা তার কমার্শিয়াল পাইলট হবার স্বপ্ন পরিত্যাগ করেন আর যোধপুর থেকে ফিরে যান লাহোরে। সেখানে তিনি Mayo School of Art এ জয়েন করেন, আর বাঙ্গালি চিত্রকলায় প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করেন। এই স্কুল থেকে তিনি ডিপ্লোমা ইন ফাইন আর্টস নিয়ে বের হন।

 

দেশ ভাগ এর পর সারলা ঠাকরাল দিল্লী তে চলে আসেন তার দুই কন্যা সহ। তিনি ছিলেন “আরয সমাজ” Arya Samaj নামে একটি হিন্দু রিফরম মুভমেন্ট এর অনুসারী। এই সমাজ বলে, হিন্দু মেয়েদের ২য় বিয়ে সম্ভব। সারলা ঠাকরাল ১৯৪৮ সালে পি পি ঠাকরাল কে বিয়ে করেন। আঁকা আঁকির পাশাপাশি তিনি পোশাক এবং কস্টিউম জুয়েলারি ডিজাইনিং শুরু করেন। টানা ২০ বছর তার ডিজাইন করা শাড়ি, ড্রেস এবং গহনা ভারতের বাজারে বিস্তার করে ছিল।

 

২০০৯ সালের ১৫ই  মার্চ সারলা ঠাকরাল মারা যান।

 

বাংলাদেশ থেকেও এরকম আরো অনেক ডানাবাদি মেয়ে উঠে আসুক। পুরন হোক তাদের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ।  ( সাথে আমারে এট্টু পেলেন এর পিছনে উঠায়েন আরকি :p )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *