৯৬/৩৬৫

লেখার তারিখঃ জুন ৩, ২০১৫ । ১১.৩৬ পি.এম

আমি কখনই কফি লাভার ছিলাম না। আমি সব সময় ই টি ড্রিংকার এর দলে। চা না কফি জিগাইলে আমি চা ই কই বেশির ভাগ সময়। কফি জিনিশ টা আমার কাছে ঠিক রেগুলার পান যোগ্য পানীয় না। শখ কইরা খাওয়ার মত জিনিষ। এর মুল কারন অভ্যাস না থাকা আর দুই নম্বর কারন কফি সম্পর্কে খুব ই কম জানা। এইডা কি তিতা কইরা খাওন লাগে? না মিশটি কইরা। দুধ কি বানানির সময় মিশানি লাগে নাকি পরে? চা এর লগে যেরম আমি এক গামলা চিনি মিশাই অইরম কফির লগে মিশাইলে কি মাইনসে হাসবো? এই সব চিন্তা করতে করতে শেষ মেষ না বাবা আমরার চা ই ভাল। এই চা লাগা দুই কাপ, দুধ চিনি বেশী।

কিন্তু কফি ব্যাপার টা সব সময় ই একটা রহস্য হয়া থাক্সে ওই জন্য। চা এর যেমন খুব বেশি হইলে তিন চার রকম এর ভেরিয়েশন দেখা যায়। ওই লাল চা, দুধ চা, লেবু চা, আদা চা, মাল্টা চা এই শেষ। এহন আবার কি কি জানি বাইর হইসে গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি হাবি যাবি। কিন্তু নাম শুইনাই বুঝন যায় যে এই ভেরিয়েশন গুলা মোর ফোকাসড অন দা এডেড ফ্লেভার, রেদার দ্যান দা টি ইটসেলফ। মানে কি না চা এর লগে হাবি যাবি মিশাইয়া ভেরিয়েশন বানানির চেষ্টা, কিন্তু মুল চা ওই এক রকম ই। কিন্তু কফির ক্ষেত্রে দেখলাম কত্ত রকম এর ভেরিয়েশন । কই জন্মাইসে তার উপরে ভেরিয়েশন। বানানির পর কেমনে রোস্ট করসে তার উপরে ভেরিয়েশন। আবার কফি বিন গুরা করনের সময় কেমনে গুরা করে তার উপরে ভেরিয়েশন। মানে ভুং ভাঙ এর শেষ নাই। তাই ঠিক করলাম এই অজানা কে জয় করতে হবে। পড়ালেখা করলাম একটু আর মহান রাশা তো আসেই। ইশকুল এর দোস্ত রা কত ভাল ভাল জিনিশ শিখায়। সিগারেট খাওয়া শিখায়, পর্ণ দেখা শিখায়, মেয়ে পটানির তরিকা শিখায়। আর এই দোস্ত আমারে শিখাইসে কফি আর ব্লুজ মিউজিক।

পড়ালেখা কইরা যা জানলাম তা হইসে কফির আবিষ্কার হয় আফ্রিকান অঞ্চলে। লিজেন্ড বলে ইথিওপিয়ার রাখাল রা একদিন দ্যাখে যে তাদের ছাগল গুলা কফি বিন খায়া পাগলের লাগান নাচা নাচি করতাসে। এইডা দেইখা হেরা বুঝসে যে হুমম কফি গাছে যেই বিন হয় তা দিয়া উত্তেজক জিনিষ পাতি বাননি যায়। প্রথম দিকে আরব রা হুদা হুদাই কফি খাইত চাবায়া। আরব এর লোকেরা করত কি চর্বির লগে কফি বেরি মিশাইয়া বল এর মত বানাইয়া খাইত।

ইসলাম ধর্মের প্রসারের সাথে কফির প্রসার এর একটা বিরাট যোগাযোগ আছে। ইসলাম ধর্মে মদ খাওয়া নিষিদ্ধ হওয়ার পর লোকজন এর মধ্যে কফি সেবন করা বাইরা যায়। এই সব দেইখা অনেক চার্চ আবার কফি খাওন নিষিদ্ধ ও করসিল। কারন মুসলমান রা খাইত। ১৭শ শতাব্দী তে তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য তেও কফি নিষিদ্ধ করা হইসিল পলিটিকাল কারণে। ১৬৭৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা সব কফি হাউজ রে নিষিদ্ধ করসিল। কারন উনি মনে করসিলেন কফি হাউজ গুলা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা লাইগা মানুষ ব্যবহার করতাসে। তাই কফি আসক্তি রে কেউ যদি এখন বড়লোকি ব্যাপার সেপার বা পাশ্চাত্যের অনুকরণ ভাইবা এভয়েড করে তাইলে সেইটা ভুল হবে।

কর্কট কান্তি রেখা আর মকর ক্রান্তি রেখা বইলা দুইটা কাল্পনিক রেখা আসে যা পৃথিবীরে পাক দিসে। ইংরাজি তে যারে বলে ট্রপিক্স অফ ক্যান্সার আর ট্রপিক্স অফ কেপ্রিকরন। এই দুই রেখার মাঝে যে সব এলাকা পরসে তারে নাম দেওয়া হইসে বিন বেল্ট। দুনিয়ার সব কফি এই বিন বেল্ট এর দেশ গুলাতেই জন্মায়। উইকিপেডিয়া পইড়া জানসি সব চেয়ে বেশি কফি প্রডিউস করে ব্রাজিল। সারা দুনিয়ার কফির ৩৩.১% মানে তিন ভাগের এক ভাগ ব্রাজিল থিকাই আসে। আমেরিকার কফি উৎপাদনকারি একমাত্র স্টেট হইল হাওয়াই।

কফি রে মূলত দুই রকম ভাগে ভাগ করন যায়। এরাবিকা আর রোবাস্তা। দুনিয়ায় যত কফি খাওয়া হয় তার ৭০ ভাগ ই এরাবিকা আর ৩০ ভাগ রোবাস্তা। এরাবিকা কফি মাইল্ড হয় কিন্তু অনেক এরোমেটিক মানে সুন্দর গন্ধ ওলা হয়। রোবাস্তা কফি তিতা বেশি কিন্তু এরাবিকা কফির চেয়ে ডাবল কেফিন থাকে এর মধ্যে।

কফি কিন্তু গাছে ধরে। কফি গাছ প্রায় ৩০ ফিট পর্যন্ত বড় হয়। কিন্তু যখন বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয় তখন কফি গাছ রে ১০ ফিট এর বেশি বারতে দেওয়া হয় না। কফি একটা লাল রঙ এর চেরির মত দেখতে ফল এর ভিতর এ হয়। এই লাল রঙ এর চেরির মত ফলটার ভিতরে থাকে আটি বা বীজ এর মত থাকে কফি বিন। এই লাল রঙ এর চেরির মত ফল গুলারে পাইরা আইনা শুকানো হয় তারপর ছিল্লা বিচিডা বাইর করা হয়। যা কিনা দেখতে সবুজ। এইবার এই বিচি গুলারে পাঁচশ ডিগ্রি ফারেনহাইট এ রোস্ট করা হয়। কয়েক মিনিট এর মধ্যে এই বিচি গুলা পপ কইরা ফুইলা ডাবল সাইজ এর হয়া যায়। আরো কয়েক মিনিট রোস্ট করলে আরেকবার পপ কইরা ফুটে। এই ২য় বার পপ করা মানেই হইল কফি বিন রেডি। এইবার এই কফি বিন রে দরকার মত গুড়া কইরা কফির গুরা বানানি হয়।

ইনস্ট্যান্ট কফি বা নেস্কাফে আমরা যেইটা খাই অইডা আবিষ্কার করেন জর্জ ওয়াশিংটন নামে এক ব্যাডায়। আম্রিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন না। বেলজিয়াম এর জর্জ ওয়াশিংটন নামের ব্যাডা যিনি গুয়াতে মালায় থাকতেন তিনি আবিষ্কার করেন ইনস্ট্যান্ট কফি । বাণিজ্যিক ভাবে প্রস্তুত এই কফি তে পুরাপুরি আসল কফির মত টেস্ট পাওন যায় না। কাছাকাছি একটা টেস্ট পাওয়া যায়। রাশার লগে নর্থ এন্ড এ নিয়মিত একদম অরিজিনাল রোস্টেড এরাবিকা কফি খাওনের পর আমার আর নেস্কাফে ইনস্ট্যান্ট কফি ভাল্লাগে না।

কফি শপ নানান জাতের বাহারি নাম এর অপশন দেখন যায়। লাতে, এস্প্রেসো, কেপাচিনো ইত্যাদি হাবি যাবি। পরথম পরথম অনেক শরম লাগতো । ভাবতাম যদি কফি উলা ব্যাডা রে জিগাই , বাই, এস পেরেসো কিতা? তাইলে যদি বাইর কইরা দ্যায়। এর চেয়ে অবু দশ বিশ কইরা আন্দাজি একটা চুজ কইরা তিতা মুখ কইরা খাইয়া লাই। কিন্তু যে কোন কিছুর ভয় দূর করতে সেই জিনিশ লওয়া পড়া লেখার কোন বিকল্প নাই। তাই এখন আমি জানি কুনটা কি।

প্রথম জানতে হইব এস্প্রেসো (Espresso) কিতা। এইডা কুন কফি বিন এর টাইপ না। এইডা হইল একদম মিহি কইরা গুরা করা কফি বিন এর মধ্যে গরম পানি ঢাললে যেই যম তিতা কালা লিকুইড টা তৈরি হয় সেইটা। এহন এই কালা লিকুইড এস্প্রেসো টাই হইল সব কিছুর বেজ। এর লগে এইডা সেইডা মিশাইয়া সব ভেরিয়েন্ট গুলা বানানি হয়। শিশুদের সহজ কফি শিক্ষার জন্য কুণ্ডা কি নিচে লিখা দিলামঃ

কফির লগে পানি মিশাইয়া তৈরি ঘন লিকুইড = এস্প্রেসো
এস্প্রেসো + অনেক দুধ + ফোম = লাতে / Caffe Latte
এস্প্রেসো + দুধ + অনেক ফোম = কেপাচিনো / Cappuccino
এস্প্রেসো + চকলেট সিরাপ + দুধ + হুইপড ক্রিম = মোকা / Mocha (এইডা আমি খাই)
এস্প্রেসো + অনেক পানি = আমেরিকানো / Americano (এইডা রাশা খায়, উইথ মিল্ক অন দা সাইড। অনেক বেক্কল দোকানদার জানেও না যে আমেরিকানো তে মিল্ক অন দা সাইড নেওয়া যায়। আমরা কেপ্টেন্স ওয়ার্ল্ড এ গিয়া আমেরিকানো নিসি, আর জিজ্ঞেস করসি, ভাই আমাদের কি সাইডে মিল্ক দেওয়া যাবে? ওই লোক রুডলি বলসে , “না, যাবে না, আমেরিকানো তে দুধ মিশানই থাকে”)
আমেরিকানো নিয়া আরেক খান গল্প আছে। এই টার্ম টা জন্ম হইসে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়। আমেরিকান সৈন্য রা কফি অর্ডার করার সময় কইত এস্প্রেসো দেন তয় পানি পুনি মিশায় দিয়েন, বেশি কড়া কফি ভাল্লাগে না। সেই থেইকা এই পানি মিশাইন্না এস্প্রেসো কফি এর নাম হইসে আমেরিকানো। আমেরিকানো রে “কাপ অফ জো” ও বলা হয়। কারন আমরিকার জি আই জো রা এই কফি বেশি খাইত।

কফি খাইলে আমাগো এরম উত্তেজনা ক্যান লাগে হেইডা লয়া পড়ালেখা কইরা যা পাইসি তা দিয়া আজকের লেখা শেষ করি। আমাগো ব্রেন এ এডেনোসাইন (Adenosine) বইলা একটা জিনিশ থাকে যেগুলা কিনা খালি রিসিপ্টর (Receptor) নামের জিনিষ এর লগে ঘুরা ঘুরি করতে চায়। এই দুই জিনিশ যখন এক হয় তখন আমাগো ঝিমানি আহে। কফি তে থাকে কেফিন। এই কেফিন যখন আসে তখন সব রিসিপ্টর এই কেফিন এর উপরে ক্রাশ খাইয়া তার দিকে দউর দিয়া আয়া পরে এডেনোসাইন রে একলা থুইয়া। এদিকে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড যহন দেখে যে এডেনোসাইন এরম এতিম এর লাগান ঘুরা ঘুরি করতাসে, তখন তার মাতা মুতা খারাপ হয়া যায় আর মনে করে কাম সারসে ইমারজেন্সি সিচুএশন। সে তখন এড্রেনাল গ্ল্যান্ড রে বেশি কইরা এড্রেনালিন উৎপাদন করতে বলে। ফলাফল কফি খাইয়া আমাগো শইল্যে জুস আয়া পরা।

আমার ক্ষেত্রে উলটা টা হয় অবশ্য। কফি খাইলে আমার ঘুম বেশি ধরে। মাথার তার তুর তো আগেই ছিরা রইসে। তাই উলটা পালটা সিগন্যাল পায় মুনে লয়। উত্তেজনার হরমোন ছাড়নের বদলে আমার ব্রেইন “ঘুম পাড়ানি হট মাসি পাশী মোদের বাড়ি এসো, আর কই বসবা খাট ছাড়া, মু হা হা” এই টাইপ এর অশ্লীল গান শুরু করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *