লেখার তারিখঃ মে ৯, ২০১৫ । ১১.৪৩ পি.এম
একাত্তুর নাম্বার নোট এ একাত্তুর নিয়া লিখুম না এইটা হয় নাকি। একাত্তুর নিয়া আমার আগ্রহ এর পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান প্লেন এর। আমি শুধু এইটুক জানতাম যে মুক্তিযুদ্ধে দুইটা বিমান আর একটা হেলিকাপ্টার নিয়া বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠিত হইসিল। তারপর যখন দি এমেজিং ডিসি-৩ বিমান টা আগারগাও এ বিমান বাহিনী যাদুঘর এ আসলো আর আমি আর কারিব ভাই গিয়া টুইন ওটার বিমান টার ককপিট এ বসলাম, ডিসি-৩ টার ককপিট এ বসলাম, কেমন একটা ইলেকট্রিক শক লাগলো শরীর এ । তারপর শুনলাম “কিলো ফ্লাইট” এর কথা। আর দেন ইট অল স্টারটেড মেকিং সেন্স।
ঠিক করলাম , নাহ আমাকে এগুলার ইতিহাস জানতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কি বিমান, কারা চালাইসে, ওগুলার রেজিস্ট্রেশন কি ছিল এইটাই যদি না জানি তাইলে কিয়ের প্লেন স্পটার হইসি।
প্রথমে একটু বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কেমনে তৈরি হইল তার ইতিহাস টা কই। তারপর লিখুম বিমান বাহিনীর প্রথম তিন টা বিমান নিয়া গঠিত ইউনিট “কিলো ফ্লাইট” নিয়া। আর তারপরে এই তিনটা যুদ্ধ অনুপযোগী বিমান রে কিভাবে অসম্ভব টেলেন্টেড এভিয়েটররা কাস্টোমাইজ করল আর মুক্তিযুদ্ধের অপারেশন এ নামাইল সেই সুপার এক্সাইটিং গল্প। এক দিন এ তো সব লিখতারুম না, তাই কিস্তি কিস্তি কইরা লিখুম।
১৯৭১ সাল। আগস্ট মাস এর মাঝা মাঝি। কলকাতায় মিটিং বসে ভারত এবং বাংলাদেশ সরকার এর। ভারতের পক্ষ থেইকা আসছেন ডিফেন্স মিনিস্টার জগজীবন রাম আর ডিফেন্স সেক্রেটারি কে বি লাল। বাংলাদেশ এর পক্ষ থেইকা আছেন, প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদ, কমান্ডার ইন চীফ মোহাম্মদ আতাউল হক ওসমানী আর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ গ্রুপ ক্যাপটেন আব্দুল করীম খন্দকার।
কয়েকটা অন্যান্য বিষয় নিয়া আলোচনার পর বাংলাদেশ এর পক্ষ থেইকা বলা হয়,
“আমাদের বিভিন্ন ধরনের পাইলট আছে। বিমানের বিভিন্ন ট্রেড এর টেকনিশিয়ান ও আছে। কয়েকটি বিমান যদি ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কে দেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠন করা যেতে পারে। এটা হলে স্থল বাহিনীর সাথে বিমান বাহিনীও অবদান রাখতে পারে। ”
জবাবে ভারতের ডিফেন্স মিনিস্টার জগজীবন রাম বলেন,
“দেখেন, আমাদের হয়ত খুব তারাতারি ই পাকিস্তান এর সাথে যুদ্ধে জড়ায় পরতে হবে। আবার চীন যদি এই যুদ্ধে পাকিস্তান এর মিত্র হিসাবে যোগ দ্যায় তাহলে আমাদের অতিরিক্ত যুদ্ধ বিমান থাকবে না আপনাদের দেয়ার মত”
আমার মনে হইসে একজন ডিফেন্স মিনিস্টার হিসাবে এই পর্যন্ত বলা উনার ঠিক ই ছিল । কিন্তু এরপর উনি যা বলেন তা আমার কাসে একটু বেশি বেশি ই লাগসে। ইটস লাইক কেউ আপনার কাছে সাহায্য চাইতে আসছে আর আপনি বললেন, ঠিক আসে সাহায্য করুম তয় একটু নাচো তো দেখি। তিনি বলেন,
“আপনাদের পাইলট রা যদি বিমান চালনা করতে চান, সেক্ষেত্রে তাদের ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলট হিসাবে পরিচয় দিতে হবে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর ইউনিফর্ম পরতে হবে, ভারতীয় বিমান এর ল অনুসারে চলতে হবে এবং বিমান এর পিছনে ভারতের পতাকা আঁকা থাকবে”
আমরা বীর এর জাতি। এই সব ইন্সাল্ট হজম কইরা চইলা আসা আমাদের স্বভাব না। তাই ওই মিটিং এও আমাদের বাঘের বাচ্চা রা চুপ কইরা থাকেন নাই। গ্রুপ ক্যাপটেন আব্দুল করীম খন্দকার ভারতের এই প্রস্তাব এর জবাবে শুধু দুইটা লাইন বলেন,
“We are at war for an independent country. Our motive is not to fly planes only”
ভারতের এই দুইজন ব্যুরোক্র্যাট বাংলাদেশ কে হতাশ করলেও সাহায্য আসে অন্য দিক থেইকা। ১৯৭১ এ ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান ছিলেন এয়ার চিফ মার্শাল প্রতাপ চন্দ্র লাল। তিনি ভারতীয় হলেও তার শিকর আর এক্সটেন্ডেড শিকর ছিল বাংলাদেশে। উনার মা ছিলেন ময়মনসিংহের আর স্ত্রী লীলা লাল ছিলেন ফ্রম কুমিল্লা। গ্রুপ ক্যাপটেন আব্দুল করীম খন্দকার তার সাথে দেখা করে বিমান এর জন্য রিকোয়েস্ট করেন। তিনিও প্রথমে ডিফেন্স মিনিস্টার এর সুর এই কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু মা আর বউ এর প্রচণ্ড চাপ এ শেষ পর্যন্ত বলেন,
“ আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব আপনাদের কয়েকটি বিমান দিতে। তবে শিওর থাকেন সেগুলা যুদ্ধ বিমান হবে না। সেগুলো হবে বেসামরিক বিমান। নামের খাতিরে বিমান বাহিনী গঠন করা যাবে শুধু”
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠনের প্রসেস টা এই খান থেইকাই শুরু হয়। তারা তাদের কথা রাখসিলেন। বাংলাদেশ কে তিনটা বিমান দিসিলেন। যার একটাও যুদ্ধ বিমান না। কিন্তু তাতে কি আমরা থাইমা গেসিলাম? তিনটা বিমান রে সুকেশে সাজাইয়া রাইখা মুক্তিযোদ্ধা দের খবর পাঠাইসিলাম যে আমাগো বিমান বাহিনী কাগজে আসে আকাশে নাই, মনোযোগ দিয়া যুদ্ধ কর? না। আমরা এই তিনটা নরমাল সিভিলিয়ান বিমান কে কাস্টোমাইজ কইরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করসিলাম। তৈরি হইসিল “কিলো ফ্লাইট”। সেই গল্পটা আরেকদিন বলি। আজকে থাক।
এই কাহিনী আমেরিকায় হইলে এত দিনে হলিয়ুড ডজন খানেক সিনামা বানায় ফালাইতো। আফসোস আমাদের কেউ এই গল্প গুলা কোনদিন বলেই নাই।