লেখার তারিখঃ মে ৮, ২০১৫ । ১১.২২ পি.এম
আমি গত চার দিন রাত্রে নিজে রান্না কইরা খাইসি। রবি, সোম, মঙ্গল আর বুধ। রান্না করসি শুনলেই যেমন বিশাল কিছু কইরা লাইসি মনে হয় আসলে ঘটনা তেমন না। ছোট বেলায় যেমন পায়ের পাতা একটু উঁচা কইরা শইল্ডা আলগাইলেই মনে হয় লাফ দিয়া হিমালয় পার কইরা ফালাইসি এরম আরকি। জীবনেও রান্না না করা লুকের আত্ম আস্ফালন।
আমি তিনটা জিনিশ প্রেক্টিকালি রান্না করতে পারি এখন আর একটা জিনিশ থিউরিটিকালি। ভাত, ডাইল আর ডিম ভাজি রানসি চাইর দিন। আর আজকে আম্মার কাছে মুরগির মাংস রান্না করা শিখসি। মুরগির মাংস রান্না করাডা খালি দেখসি কেমনে কি কিন্তু এখনো নিজে রান্ধি নাই একবারও। তাই এখনো ঠিক রানতে পারি বলতে পারতাসি না।
রানতে গিয়া নতুন নতুন সব অভিজ্ঞতা হইতাসে। এইটা একটা ভাল দিক। মূলত এই জিনিষ টা পাইতেই রান্না শিখা শুরু করসি। যেমন আমার প্রথম দিন ডাইল রান্নার এক্সপেরিয়েন্স কই । আমি বাসায় দেখসি ডাইল রান্নার আগে আম্মা ডাইল ধয়। তাই আমি ঠিক করলাম আমিও ধুমু। একজন মানুষের জন্য রান্না তো, তাই বেশি না, মাত্র এক কাপ ডাইল লইলাম একটা বাটিতে। পানি দিলাম। হাত দিয়া লারাচারা করলাম। পানিডা ঘোলা হয়া গেল একটু পরে। এইবার সিঙ্ক এ নিয়া বাতি ডা কাইত কইরা দিলাম পানি ফালাইতে। বিয়াদ্দপ ডাইল গুলা সব পানির লগে ভাইস্যা গেলগাঁ। পুরাই “চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে গেলে অবস্থা”। এরপর আবার ডাইল লইয়া, ধুইয়া , এইবার হাত দিয়া ডাইল ধইরা রাইখা পানিডা ফালাইসি।
আমি মনে করসিলাম বড় একটা ছাকনি কিনুম। এর পর পানি ফালানির সময় ছাকনি দিয়া ফালামু, তৈলে ডাইল আর ভাইসা যাইব না। আম্মা রে জিগাইসি, আর আম্মা বলসে আমি আমার বাপ এর মতই বেকুব। তারপর ডাইল ধোউনের সিস্টেম শিখায় দিসে। বলসে ডাইল তিন ধোয়া দিবি, চাউল ও তিন ধোয়া। আর মাছ ধৌনের আগে মাছ গুলায় লবণ মাখায় লবি। তাইয়ে মাছগুলার তেল তেলা আশটে ভাব টা যাইব গিয়া আর খস খসা হইব। তিন ধোয়া কেমনে এই প্রশ্নের জবাবে মহান আম্মা বলেন, একটায় ডাইল আর পানি নিয়া ধুবি, তারপর পানিটা ফালায় দিয়া ডাইল টা আরেক টা পাত্রে রাখবি। তারপর আবার পানি দিইয়া ধুইয়া ডাইল টারে আগের পাত্রে রাখবি। এমনে আবার। এই হইল তিন ধোয়া।
আমি আরেকটা সমস্যায় পরসিলাম পিয়াজ কাটা নিয়া। পিয়াজ ছিলতে গেলে দেখি সিস্টেম লস বেশি হয়। ছুল্কা সহজে না ছিল্লে জিদদের চুটে জুরে জুরে খাবলা মারি আর প্রায় অর্ধেক পিয়াজ উইঠা যায়। তারপর যা থাকে তা পুরাই বদখত দেখতে। অথচ বাসায় দেখসি কত সুন্দর কইরা পিস পিস কাটা। আম্মারে বললাম আম্মা পিয়াজ কাটা শিখায় দাও। আম্মা দেখাইল ফাস্ট এ পিয়াজের মুখ টা কাইটা লইতে তারপর ছুরি দিয়া ঘসা দিয়া দিয়া পিয়াজ টা ঘুরাইলেই কত সুন্দর ছিলা হয়া যায়। ছিলা পিয়াজ টা রে রাখতে হইব একটা পানি ভর্তি পাত্রে। পানি ভর্তি পাত্রে ক্যান রাখতে হইব এই ধরনের গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নের জবাবে মহান আম্মা জান বলেন, কারন এর পর যহন পিয়াজডি কুচি কুচি করবি তখন আর চোখ জ্বলব না। কত সহজ অথচ কাজের টিপস। আমি অবশ্য আরেকটা জিনিষ দেখসি। পিয়াজ কাটার সময় মুখ দিয়া শ্বাস নিলে চোখ জলে না। কিন্তু আম্মার সিস্টেম টা মোর ইজি।
আম্মা আমারে আজকে মুরগির মাংস রান্নার প্রেক্টিকাল ডেমো দেখাইসে। কি কি লাগবো সব নোট কইরা আনসি। বেশি কঠিন লাগে নাই। কালকে বাজার করুম আর রাইন্ধা লামু। কি আছে দুনিয়ায়।
যদিও আজকে শুক্রবার ছিল কিন্তু অফিস ডে এর অভ্যাস বসত অনেক সকাল বেলা ঘুম থিকা উইঠা জোম্বির মত বাসার মধ্যে হাটতাসি আর সামনে পরসে আম্মা। আমি হুদাই “হ্যাপি মাদারস ডে আম্মাআআআ” বইলা আম্মারে জরায় ধরসি। তারপর নিজেই লজ্জা পায়া যখন আইসা পরসি তখন শুনি যে আম্মা বলতাসে, তুই তো আমারে একটুও ভালবাসস না। মাইনসের পুলাপান অগো আম্মাগো লগে কত আল্লাদ করে। আর তুই বছরে একটা জাবরানি দ্যাস তাও আবার লজ্জা পাস।
আমি আরো লজ্জা পায়া বালিশে ডুইবা গেলাম।