লেখার তারিখঃ মে ২, ২০১৫ । ১১.৪৯ পি.এম
মুক্তিযুদ্ধ নিয়া আমরা এত আজিব সব ধারনা নিয়া বড় হইসি। আমাদের কাছে এত পচানি হইসে এত পচানি হইসে মুক্তিযুদ্ধ কে যে আমাদের আর মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনতে ভাল্লাগে না। মুক্তিযুদ্ধ শুনলেই মনে হয় কিছু সাদাকালো ছবি, কিছু লাশের ছবি, আর কে আসল হিরো এই যুদ্ধের তা নিয়া কামরা কামড়ি। আমাদের কামরা কামড়ি দেখতে ভাল্লাগে না তাই আমরা মুক্তিযুদ্ধ রে একটা বিতর্কিত বিষয় বইলা এরায়া যাই।
ঠিক যেমনে এরায়া যাই ধর্ম নিয়া বিতর্ক গুলারে ঠিক অমনে। আমাদের ভাবনা এমন যে, থাক বাবা পরে বঙ্গবন্ধু রে ভাল লাগলে মাইনসে কইব আওয়ামী লীগ আর জিয়া রে ভাল্লাগ্লে মাইনসে কইব বি এন পি । থাক বাবা, আমি ভোট ও দিতে যাই না গেঞ্জাম এর ডরে, আমার এসব ক্যাচাল এ পইরা লাভ নাই। আমার মহান মুক্তিযুদ্ধ লেখা টি শার্ট আসে, রিষ্ট ব্যান্ড আসে। ব্যাস, আর কিছু লাগতো না।
আরো ঝামেলা হইসে আমাগো এক পক্ষ আয়া শিখাইসে মেজর জিয়া ই সব। আরেক পক্ষ আইসা শিখাইসে আরে জিয়া ক্যাডা আবার, ভারত হেল্প না করলে তো আমরা জিততেই পারতাম না। মাঝখান দিয়া আমরা ভাবসি হুর এই ভেজাল এ যামুই না, এই সব কি “মুক্তিযুদ্ধ ফুদ্ধ”, এর চেয়ে গেম অফ থরন দেহি। মানুষ ইস্মারট বলবে।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান আমি অস্মীকার করতাসি না। কিন্তু আমাদের জানানোই হয় নাই যে এই ভারত মুক্তিযুদ্ধের শুরু তে কি করসিল। ১৯৭১ এ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অফ স্টাফ ছিলেন মেজর জেনারেল জে,এফ,আর জ্যাকব। উনার লেখা একটা বই আসে, Surrender at Dacca . এই বইটা ইউনিভার্সিটি প্রেস থেইকা প্রকাশিত হইসে। এই বই এর পেজ ৪৭ এ উনি কি বলসেন তা জানা দরকার।
কংগ্রেস সরকারের ভুল বিশ্লেষণ এর ফলে ২৫ শে মার্চ এর পরে গঠিত মুক্তিযোদ্ধা দের আশ্রয়, সাহায্য, সহযোগীতা এবং বাংলাদেশ স্বাধীন করে দেবার দায়িত্ব দেয়া হয় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী কে (BSF – Border Security Force)। চিন্তা করসেন অবস্থা? এক টা দেশে যুদ্ধ লাইগা গেসে, মিলিটারি মানুষ মারতাসে, আর প্রতিবেশী দেশ আমাদের উদ্ধার করতে দায়িত্ব দিসে তাদের বি এস এফ রে, মিলিটারি রে না।বি এস এফ এর ডাইরেক্টর জেনারেল খসরু ফারামুরজ রুস্তমজী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কে বোঝাতে সক্ষম হন যে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে বি এস এফ বাংলাদেশ স্বাধীন করে দেবে। কত বড় বেকুব চিন্তা করেন।
এপ্রিলের মাঝা মাঝি ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা করার জন্য মন্ত্রীসভার এক বৈঠক ডাকেন। সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ জেনারেল এস এইচ এফ জে মানেশক কে এই সভায় ডাকা হয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাকে তখনি বাংলাদেশে সৈন্য পাঠাতে নির্দেশ দেন। কিন্তু জেনারেল মানেকশ হাবি যাবি যুক্তি দিয়া বাংলাদেশে ভারতীয় সামরিক অপারেশন শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত মানে শীতকাল পর্যন্ত বিলম্বিত করাতে সক্ষম হন।
ভারত কে জাজ করার অবস্থায় আমি নাই। ওদের দেশ, ওদের মিলিটারি। ওরা যখন ইচ্ছা পাঠাবে। কিন্তু খারাপ লাগে যে এই সাহায্য টা ওরা আগে করলে মুক্তিযুদ্ধ হয়তো আরো কিছুটা শরটার হইত। আরো অনেক গুলা প্রাণ বাচতো মানুষের। আর গর্ব লাগে যে ভারত এর বিএসএফ না আসুক বা মিলিটারি না আসুক, ডিসেম্বর আসার আগে আমরা কিন্তু হাইরা যাই নাই, আত্মসমর্পণ করি নাই। আমরা লইড়া গেসি শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত।
এই খানে একটু বইলা রাখি, আমার মুক্তিযুদ্ধা নিয়া পড়ালেখা শুরু মূলত প্লেন বিষয়ক আগ্রহ থেইকাই। আমি মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ইতিহাস আর ডিটেইল জানতে পড়ালেখা শুরু করসিলাম। আস্তে আস্তে এই নিয়াও লিখব ইনশাল্লাহ। কিন্তু আগে পইড়া বুইঝা লই বেপারটা। তবে একটা কথা প্রথমেই পরিষ্কার জানা দরকার যে
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীই সর্বপ্রথম বাংলাদেশের ভিতরে পাকিস্তানি অবস্থানের উপর আক্রমণ করে, ভারতীয় বিমান বাহিনী না।