লেখার তারিখঃ এপ্রিল ২৯, ২০১৫ । ১১.১৮ পি.এম
আজকে অপারেশন সার্চলাইট (Operation Searchlight) এর ২য় পর্ব লিখসি। ভাবসিলাম এই পর্বে শেষ কইরা দিব। কিন্তু লেখার পর দেখি ২য় পর্ব ওয়ার্ড ফাইল এর ৬ পেজ হইসে 😀 তাই ঠিক করসি এইটা ২য় পর্ব থাক। শেষ করি ৩য় পর্বে গিয়া।
আমরা ১৯৭১ এর টাইমলাইন ধইরা আগাইতাসিলাম। আর আগের লেখার অপারেশন সার্চলাইট (Operation Searchlight) এর ব্যাকগ্রাউন্ড বনর্না করা হইসে। এখন এক্সিকিউশন এর দিকে আমরা চইলা আসছি।
২০ – ২৫ মার্চ, ১৯৭১
পাকিস্তানীরা তাদের সাফল্যে নিশ্চিত করতে বাঙ্গালী সেনাদের ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্বের বাইরে পাঠিয়ে এবং পাকিস্তানী সেনাদের বাইরে থেকে শহরের মধ্যের ইউনিটগুলোতে এনে জড়ো করতে থাকেন। ২৫ পাঞ্জাব এবং ২০ বালুচ রেজিমেন্টের নিয়মিত স্থানান্তর দীর্ঘায়িত করা হল এবং এর বাইরে ১৩ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স এবং ২২ বালুচ রেজিমেন্টকে ২৫ মার্চের আগেই পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তরিত করা হল।
গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য ২৫ মার্চের আগে ঢাকার বাইরে কোন গ্যারিসনে রিইনফোর্সমেন্ট পাঠানো হলনা। চিটাগাং এ সোয়াত নামের সেই বিখ্যাত জাহাজে মজুত ছিলো প্রায় ৮০০-৯০০ টন গোলাবারুদ, যা এই অপারেশনের জন্যই প্রেরন করা হয়। ২৫শে মার্চের আগেই আরো একটি ব্রিগেডকে সাফল্য নিশ্চিত করবার জন্য পুর্ব পাকিস্তানে নিয়ে আসা নয়।
বাঙ্গালী কর্মকর্তাদের ব্যাপক হারে ছুটিতে প্রেরন করা হতে থাকলো যদিও ২১ ফেব্রুয়ারীর পর থেকে সকল ধরনের ছুটি বাতিল ঘোষনা করা হয়েছিলো। পশ্চিমা কর্মকর্তাদের দায়িত্বে থাকতে বলা হল। তাদের পরিবারকে যতটা সম্ভব পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হল। বেসামরিক পাকিস্তানী কর্মচারীদের পরিবারকেও যতটা সম্ভব শহরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হল।
অপারেশন শুরুর আগে বাঙ্গালীদের পুরপুরি নিরস্ত্র করবার অনুমতি না পেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানীরা ভিন্ন কৌশন অবলম্বন করলো যাতে বাঙ্গালী ইউনিটগুলোর থেকে তেমন হুমকীর মুখোমুখি না হতে হয়। তাদের নানা অযুহাতে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে পাঠানো হল, অথবা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে নানা কাজে ব্যস্ত রাখা হল। আর এক বাঙ্গালী ইউনিট যেন অপর বাঙ্গালী ইউনিটের থেকে দূরে থাকে সে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হল।
১ ইস্ট বেঙ্গলকে অনুশীলনের নামে চৌগাছায় পাঠানো হল। ২৯ মার্চ পর্যন্ত তারা সেখানে থাকে।
২ বেঙ্গলকে বিভিন্ন অযুহাতে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয় এবং তাদের রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়।
৩ বেঙ্গলকে সৈয়দপুর এবং রংপুরের আসেপাশে নানা গ্রুপে ভাগ করে পাঠানো হল।
৪ বেঙ্গলকে শমসেরনগর আর ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় পাঠানো হল ২৬ মার্চ স্যাবোটাজের উদ্দেশ্যে।
কেবলমাত্র চট্টগ্রামে বাঙ্গালী ইউনিটগুলো যথাস্থানে রয়ে গিয়েছিলো। কারন সেখানে বাঙ্গালীরা সংখ্যায় পাকিস্তানীদের চেয়ে অনেক বেশি ছিলো এবং এতো বড় মাত্রায় স্থানান্তর সম্ভব ছিলোনা। সেখানে খুব দ্রুত আঘাত করে বাঙ্গালীদের নির্মূল করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এর বাইরে নৌবাহিনীর ঘাঁটি থেকে নৌসেনা ও নৌবাহিনীর জাহাজসমূহের মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনা ইউনিটগুলোকে সাপোর্ট দেবার পরিকল্পনা করা হয়। চট্টগ্রামে বাঙ্গালী নৌসেনার সংখ্যা কম ছিলো, এবং তাদের ২৫ মার্চের আগেই নিস্ক্রিয় করে ফেলা হয়।
২৫ মার্চ রাত ১ টা ১০ মিনিটে অপারেশন সার্চ লাইট শুরু হবার সময় নির্ধারিত ছিল পরিকল্পনা মোতাবেক। অন্যান্য গ্যারিসনগুলোকে জিরো আওয়ারেই তাদের তৎপরতা শুরু করবার জন্য ফোনে নির্দেশ দেবার কথা। জেনারেল ফরমান নিজেই ঢাকা এলাকার পাকিস্তানী বাহিনীর কমান্ড গ্রহন করলেন। বাকী গ্যারিসন এবং অন্যান্য অঞ্চলের দায়িত্ব মেজর জেনারেল খাদিম নিজের ঘাড়ে নিলেন। লেঃ জেনারেল টিক্কা খান অপারেশন তদারকি করবার জন্য এবং যেকোন জরুরী দরকারে সাহায্যের জন্য ১৪ নং ডিভিশনের ৩১তম ফিল্ড কমান্ড সেন্টারে উপস্থিত থাকলেন। অল্প কিছু সময় পরেই শুরু হবে নিজের দেশের মানুষকে হত্যা করবার জন্য ইতিহাসের নিকৃষ্টতম সামরিক অভিযানের।
মূল অপারেশন
২৫ মার্চ, ১৯৭১, পূর্ব পাকিস্তান
রাত ১১:৩০ মিনিট
রাত ১ টা ১০ মিনিটে শুরু হবার কথা থাকলেও পাকিস্তানি বাহিনী রাত ১১ তা ৩০ মিনিটেই বেরিয়ে পরে ক্যান্টনমেন্ট থেকে। ফিল্ড লেভেলের কমান্ডারদের দাবী অনুযায়ী বাঙ্গালীদের পাল্টা আঘাত হানার আর সতর্ক হতে পারার সুযোগ না দিতে সময় এগিয়ে আনা হলো। তাদের ৬ ঘন্টা সময় দেয়া হলো পুরো অপারেশন শেষ করবার জন্য। অপারেশন শুরুর আগে ঢাকা থেকে দেশের বাইরে এবং অন্য যে কোন যায়গায় যোগাযোগ করবার সকল ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হলো।
ঢাকার জন্য নিম্নরুপ পরিকল্পনা করা হয়েছিলো যা অনুসারে অভিযান এগিয়ে চলবেঃ
১। ১৩ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের নিরাপত্তার জন্য আর রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে থাকবে।
২। ৪৩তম লাইট এক এক রেজিমেন্ট তেজগাও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
৩। ২২ বালুচ রেজিমেন্ট ইপিআর কে নিরস্ত্র করবে এবং পিলখানা সদর দপ্তরের ওয়ারলেসের নিয়ন্ত্রন হাতে নেবে।
৪। ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট রাজারবাগ পুলিশ লাইন নিয়ন্ত্রনে আনবে।
৫। ১৮তম পাঞ্জাব রেজিমেন্ট নবাবপুর এবং পুরান ঢাকায় তল্লাশী চালাবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
৬। ৩১ ফিল্ড রেজিমেন্ট ঢাকার সুরক্ষায় থাকবে। এবং মোহাম্মদপুর ও মিরপুর দখল করবে।
৭। ৩ নং স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপের একটি কমান্ডো প্লাটুন শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দী করবে। (অভিযানে অংশ নেবে ৩ নং এসএসজির একটি কোম্পানী তিনটি দল বা প্লাটুনে বিভক্ত হয়ে, একটি প্লাটুন মুল অপারেশনের জন্য, আর বাকী দুটো সাপোর্ট পার্টি)
৮। ২২ বালুচ এবং ৩২ পাঞ্জাব ঢাকা ভার্সিটির “বিদ্রোহীদের” দমন করবে। প্রধান টার্গেট হবে জগন্নাথ হল।
৯। সবশেষে ২২ বালুচ পিলখানায় রিইনফোর্সমেন্ট হিসেবে গমন করবে।
২য় পর্ব এ পর্যন্তই থাক। আগামী পর্বে এই লেখা শেষ করব ইনশাল্লাহ। আর সেইখানে থাকবে এই রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে গ্রেফতার অভিযান।
আগামী পর্বে সমাপ্য (এইবার শিউর সমাপ্য :D)