৫৭/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ২৫, ২০১৫ । ১১.৪৩ পি.এম

আধুনিক চিত্রকলার একটা গুরুত্বপূর্ণ মুভমেন্ট/স্টাইল হইল ইম্প্রেশনিজম (Impressionism) । কিন্তু মজার জিনিষ হইল ইম্প্রেশনিস্ট কথাডা প্রথম বার ব্যাবহার করা হইসিল একটা গালি হিসাবে। ইম্প্রেশনিজম টার্ম টা প্রথম ব্যবহার করেন লুইস লি রয়(Louis Leroy) নামের এক সমালোচক। তিনি ক্লদ মনেএ (Claude Monet) এর ইম্প্রেশন সানরাইজ (Impression, Sunrise (Impression, soleil levant)) ছবি টা লয়া Le Charivari পত্রিকায় লেখেন যে, এই ছবি একটা ইমপ্রেশন ছাড়া আর কিছু না। আমার বাসার ওয়ালপেপার ও এর চেয়ে বেশি ভাল।

“Impression—I was certain of it. I was just telling myself that, since I was impressed, there had to be some impression in it … and what freedom, what ease of workmanship! Wallpaper in its embryonic state is more finished than that seascape”

ইম্প্রেশনিজম এমন একটা সময় জন্ম নিসিল যখন পেইন্টিং মানেই মানুষ বুঝতো খুবি পরিশীলিত, সাইজা গুইজা আর্টিস্ট এর সামনে বইসা করানো পোরট্রেইট অথবা ধর্মগ্রন্থ থেইকা উইঠা আসা কোণ ঘটনার পেইন্টিং। ফ্রেঞ্চ একাডেমী অফ ফাইন আর্টস ও এই রিয়ালেস্টিক আর ক্লাসিকাল ঘরানার পেইন্টিং রেই প্রমোট করত আর পোলাপান রে শিখাইত। ল্যান্ডস্কেপ আর স্টিল লাইফ ছবি রে ভাবা হইত নিচু জাত এর আঁকা আঁকি। আর পোড়ট্রেইট আর হিস্টোরিকাল ছবি বিশাল দাম এ বেচা হইত।

ওইসময়ের চার তরুণ আর্টিস্ট ক্লদ মনেএ (Claude Monet), পিয়েরে রেনোয়া ( Pierre-Auguste Renoir) আলফ্রেড সিস্লি ( Alfred Sisley) আর ফ্রেড্রিক বেজিইল (Frédéric Bazille) এর চিন্তা ভাবনা ফ্রেঞ্চ একাডেমি থেইকা পুরাই আলাদা ছিল। ইনারা যেই ক্যাফে তে আড্ডা দিতে যাইতেন সেইখানে আরেকজন আর্টিস্ট ছিলেন এডওয়ার্ড মেনেএ (Édouard Manet) তিনিও আসতেন। ইনারে ওই তরুণ চারজন বেশ শ্রদ্ধা ভক্তি করতেন। তাদের লগে আরো আসিলেন Camille Pissarro, Paul Cézanne, আর Armand Guillaumin এর মত আর্টিস্ট রাও।

এই মেনেএ এর ছবি ফ্রেঞ্চ একডেমি রিজেক্ট কইরা দিসিল। কইসিল যে এইডা আমাগো একজিভিশন এ দেখানি যাইব না। কারন ইডা উঁচা জাত এর পেইন্টিং হয় নাই। ফ্রেঞ্চ একাডেমী অফ মডার্ন আর্ট এর এই নাক উঁচা এলিট জাজমেন্ট এ মেনেএ এর অনুসারী সেই তরুণ আর্টিস্ট রা খুবি বিরক্ত ছিলেন কারন তাদের ছবিও একাডেমী বাতিল কইরা দিসিল । আস্তে আস্তে দানা বাধতেসিল নতুন রেভোলিউশন এর ।

অবস্থা বুইঝা সম্রাট ৩য় নেপোলিয়ন কইলেন এই বাতিল গো লয়া একটা আলাদা একজিভিশন হইব (The Salon of the Refuse)। পাব্লিক ই ঠিক করুক, কুনটা ভাল আর কুনটা খারাপ। পাবলিক এর তো এই নতুন ইস্টাইল দেইখা মাথা মুথা খারাপ। ১৮৮৩ থেইকা ১৮৮৬ এই তিন বছর নিয়মিত ভাবে এই বাতিল দের একজিবিশন চলল আর ইম্প্রেশিনজম এর জায়গাটা পাকা পোক্ত হয়া গেল মডার্ন আর্ট এর দুনিয়ায়।

এতো খন যা কইসি তা তো ইম্প্রেশনিজম এর ইতিহাস। কিন্তু একটা পেইন্টিং রে ইম্প্রেশনিজম আর্ট কখন বলা যাবে এইডা বুঝাও তো জরুরি। ইম্প্রেশনিজম আর্ট সেইটাই যেইটা দেখলে মনে হবে যিনি আক্সেন তিনি ঘটনার দিকে হঠাত এক নজর তাকাইসেন আর আইক্কা ফালাইসেন। ওই সময় উনার মনের উপরে ঘটনা টার, দৃশ্য টার যেই ছাপ পরসে উনি সেটাই আক্সেন।

ছোট ছোট ব্রাশ স্ট্রোক ব্যাবহার কইরা আঁকা ইম্প্রেশনিজম আর্ট এর ছবি গুলায় মানুষ বা অন্য কিছুর কিছুর একটা ধারনা বা ইম্প্রেশন দেয়া হয় কিন্তু খুব ডিটেইলে না। এমন না যে মানুষ বা গাছ একদম ফটো রিয়ালিস্টিক কইরা আঁকা হয় যাতে এক্কেরে চেহারার ডিটেইল, নাকের লুম কিংবা গাছের গায়ে জরিনা+কুদ্দুস সব দেখা যায়। কিন্তু বুঝা যায় কুন টা গাছ আর কুনটা মানুষ।

খেয়াল করলে দেখবেন ইম্প্রেশনিস্ট আর্টিস্টরা তাদের আঁকা ছবিতে রঙ গুলা আনব্লেন্ডেড মানে একটার সাথে আরেকটা মিশা যায় নাই এমন রাখে। এমনে ছবি তে বেশ একটা ডাইনামিক কালার এফেক্ট আসে। কারন আমাদের চোখ আর মস্তিষ্ক আলাদা আলাদা কালার রিকগ্নাইজ করতে পাইরা খুবি খুশি হয় আর আমরা ভাবি আহা কি সুন্দর কালার ছবি টার।

ইম্প্রেশনিজম আর্টিস্ট দের সাবজেক্ট নির্বাচন করা তাদের টেকনিক এর মতই আলাদা ছিল। বেশির ভাগ ইম্প্রেশনিস্ট আর্টিস্ট ই শহুরে মানুষের দৈনন্দিন জীবন কে তাদের ছবির সাবজেক্ট হিসাবে বাইছা নিসেন।

ইম্প্রেশনিজম আর্ট এর আরেকটা লক্ষ্যনিয় জিনিষ হইল ছবি তে ন্যাচেরাল লাইট এর প্রভাব। এক্টু যদি কস্ট কইরা গুগল কইরা ক্লদ মনেএ (Claude Monet) এর Woman with a Parasol ছবি টা দেখেন তাইলে বুঝতে সুবিধা হইব কি কইতে চাইতাসি। এই ছবি টাতে মনেএ উনার বউ আর পিচ্চি রে আকসেন। খুবি সাধারণ একটা দৃশ্য। উনার বউ কেমেলি একটা বড় ছাতি (Parasol) লইয়া দাড়ায় রইসেন। পিছনে টুপি পরা উনার ছেলে জিন মনেএ। কিন্তু ছাতাটার উপর সূর্যের আলো, টুপির উপর সূর্যের আলো আর পায়ের কাছের হলুদ ঘাস ফুল গুলায় সূর্যের আলোর খেলা টা খেয়াল করেন। আর পিছনে মেঘের সাথে আকাশের মেলামেশা তো মন ভাল কইরা দেয়ার মত নীল। এইখানে কোথাউ কিন্তু তাদের দুইজন এর চেহারা ডিটেইল এ বুঝা যাইতাসে না। কিন্তু ছবি টা যে আর্টিস্ট এর সাথে সাথে আমরা যারা দেখতাসি তাদের মনেও একটা ইম্প্রেশন তৈরি করে তাতে কোনই সন্দেহ নাই।

আরেকজন আর্টিস্ট ছিলেন মনেএ এর সাথে রেনোয়া। রেনোয়া এবং মনেএ টানা দুই মাস এই নতুন স্টাইল টা পারফেক্ট করার কাজে লাইগা থাকেন। যা পরবর্তী তে আর্টিস্ট রা ইম্প্রেশনিজম বইলা ফলো করে। রেনোয়ার প্রথম দিক কার কাজ এ দেখলে বোঝা যায় উনার পোরট্রেইট এর প্রতি একটা বিশাল দুর্বলতা ছিল। যেইটা পরে ইম্প্রেশনিজম আর্ট শুরু করার পরেও হারায় যায় নাই। অনেকে বলেন, পোরট্রেইট থেইকা আয় করা টাকা পয়সাই তারে স্বাধীনতা দিসিল ইম্প্রেশনিজম এর মত স্টাইল নিয়া কাজ করার। এই বিষয় টা যারা বিয়ার ফটোগ্রাফি করেন তাদের ইন্সপায়ার করব বইলা আমি মনে করি। রেনোয়ার একটা ছবি আসে Dance at Le Moulin de la Galette। এইটারে তখন কার ক্রিটিক রা পছন্দ করে নাই মোটেও। এখন এইটা রে ইম্প্রেশনিজম এর একটা অন্যতম মাস্টার পিস হিসাবে গণ্য করা হয়।

ইম্প্রেশনিজম দিয়া প্রভাবিত হইসিলেন সিজেন ও । আগের লেখায় বলসি তার আঁকা ছবি আবার প্রভাবিত করসিল পিকাসো আর জর্জেস ব্রক রে কিউবিজম কনসেপ্ট টা শুরু করতে। ইম্প্রেশনিজম যে শুধু পেইন্টিং এ থাকে তা না। ইম্প্রেশনিজম প্রভাবিত করসিল কবিতা আর সংগীত কেও। আগ্রহ থাকলে Charles Baudelaire এর কবিতা নিয়া আর Claude Debussy এর কম্পোজ করা মিউজিক নিয়া পইড়া দেখতে পারেন। আরো একটা জিনিষ আসে যেইটার নাম পোস্ট ইম্প্রেশনিজম। এইটা লওয়াও পড়তে পারেন যদি মুঞ্ছায় জানতে।

লেখাটা শেষ করি একটা রেফারেন্স দিয়া। Edgar Degas এর ব্যালেরিনা দের উপর করা কাজ গুলা দেইখেন। আমার অনেক ভাল্লাগসে উনার ব্যালেরিনা দের উপর করা কাজ গুলা।

One Reply to “৫৭/৩৬৫”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *