৪৮/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ১৬, ২০১৫ । ১১.৪০ পি.এম

আমাদের প্রতিবাদ শেখানো হয় না। আমাদের অন্যায় দেখানো হয়, অন্যায় এর শাস্তি দেখানো হয়, শাস্তি পাবার বিচার দেখানো হয় কিন্তু প্রতিবাদ টা আর দেখানো হয় না। একটা ঘটনা যখন ঘটে তখন তার ছবি সহ বর্ণনা ছাপা হয়। অনেক আলোচনা হয়। কিন্তু প্রতিবাদ এর ব্যাপারটা এক লাইনে শেষ “অমুক ঘটনার প্রতিবাদে এগিয়ে এলে… “ ব্যাস শেষ। এই এগিয়ে আসা টা কেমন? কি বলসিল? কি করসিল? তার কোন ডিটিএইল থাকে না। আমরা তাই ধর্ষণের ডিটেইল জানি, যৌন হয়রানির ডিটেইল জানি কিন্তু একটা প্রতিবাদ যে হইসিল ভিক্টিম বা আসে পাশের এক জন এর থেইকা সেইটার ডিটেইল আর জানি না ।

তাই চোখের সামনে একটা ঘটনা যখন ঘটে আমরা হ্যাং করি। আমরা ওই ওই বইলা নরপশু গুলার উপর ঝাপাইয়া পরি না। আমরা বুঝি না কি করতে হবে। আর ওরা ভাবে আমরা ভয় পাই। আমরা আসলেও ভয় পাই। কি করুম না করুম তারপর কি হইতে কি হবে তা বুঝতে না পারার ভয়। আমাদের যদি এগজাম্পল থাকতো যে অমুক সেম ঘটনায় অমুক এইভাবে আগায় আসছিল তাইলে আমরাও তার মত আগায় আসতাম।

কিন্তু আমরা কি শিখি? আমাদের টিভি, সিনেমা আমাদের কি শেখায়? প্রতিবাদ করতে হইলে নায়ক হইতে হয়। প্রতিবাদ করতে হইলে ইয়া বড় বড় মাসল থাকতে হয়। আর দশটা গুণ্ডা কে এক হাতে উঠাইয়া ফিক্যা মারতে হয়। আর আক্রান্ত হইলে বলতে হয়, ছেড়ে দে শয়তান, তর ঘরে কি মা বোন নাই। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে গেলে প্রথমে যে মাইর খায় তার কোন কিছু আমরা দেখি নাই। মাইর খাইয়াও যে উইঠা দাঁড়ানো যায় আর তখন যে আরো মানুষ আগায়া আসে তাও আমরা কিছু কিছু শুনসি কিন্তু দেখি নাই কখনো। তাই আমাদের সামনে ইভ টিজিং ঘটলে আমাদের প্রসেসর হ্যাং করে। আমরা প্রসেস করতে করতে ঘটনা শেষ।

আমাদের আম্মারা আমাদের শিখাইসে, বাবা গন্ডগুল এ যাবা না। গন্ডগুল এ যায় খারাপ ছেলে রা। তাই আমরা একটা ছেলে আরেকটা মেয়েরে রাস্তায় টানাটানি করতাসে দেখলে মাথা নিচু কইরা পাশ কাটায়া যাই। না না, ঝামেলায় জড়ানো যাবে না। অদের সমস্যা ওরাই সল্ভ করুক। বোঝার চেষ্টাও করি না, এইটা তার পরিচিত, না ইভ টিজার, না ছিনতাইকারী। আম্মার ভাল ছেলে হয়া আমরা বড় হই। এই ঘটনার প্রতিবাদ করি নাই দেখলে আমার আম্মা খুশি হইত না আমারে ঘিন্না করত ওইটা ভাবার মত টাইম নাই আমাদের।

আমরা ইভ টিজিং শব্দটা ব্যাবহার করি অনেক। শুনলেই মনে হয় দুই টা মেয়ে হাইটা যাইতাসে আর কিছু আশির দশকের রক স্টার মার্কা পোশাক পরা পোলাপান শিষ মারতাসে। আমাদের এইটাই ইভ টিজিং। এইটটুক কি। আর কিছু না। আমার বন্ধুটাই যখন পাশে দিয়া হাইটা যাওয়া মেয়েটারে উপরে নিচে দেখতে দেখতে মনে মনে বিবস্ত্র করে অথবা বাসে পাশের সিট এর লোক টা যখন জানালা দিয়া পাশের রিকশায় যাওয়া মেয়েটার উদ্দেশ্যে কমেন্ট পাস করে, আমাদের তাদের ইভ টিজার মনেই হয় না। কারণ আমাদের তো কেউ শিখায় নাই কোন কোন গুলা ইভ টিজিং, কোন কোণ গুলা যৌন হয়রানী।

এগুলা নিয়া আমরা অনেক ফিস ফাঁস করি। ভদ্র করে করে বলি, গায়ে হাত দিসে। কিন্তু আমার মনে হয় কত রকম ভাবে যে ইভ টিজিং হয় এইটা সরাসরি বলা উচিত। চোর চুরি করলে আমরা তো বলি না, “লোকটা আসলে না জিজ্ঞেস করে জিনিষ নিয়ে গ্যাসে”। তাইলে পুরুষ দের করা নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর কাজ গুলাকে একটা সুন্দর শব্দ ইভ টিজিং দিয়া আমরা জেনারেলাইজ করি ক্যান? এইটা নিয়া দরকার হইলে পোলাটার ছবি দিয়া সরাসরি বলা উচিত যে এই হারামজদায় এই এই করসে। তবে অবশ্যই অবশ্যই সব ক্ষেত্রে মেয়েটার নাম পরিচয় ছবি গোপন রাইখা। নাইলে এইটা পর্ণ এর আরেকটা উৎস হয়া যাবে কারো কারো কাছে।

মানুষের প্রতি করা মানুষের এই সব পশুত্ব বন্ধ হইতে হবে। যখন যেখানে পারা যায় প্রতিবাদ করতে হবে। আমরা প্রতিবাদ না করলে ওরা ভয় পাবে না। ওরা ভয় না পাইলে এইটা থামবে না। ওরা ভাবতেই থাকবে ওরা সংখ্যায় অনেক, আর পাবলিক খালি তামশা দেখার জন্যই রাস্তায় নামে। আমাদের রক্ষার জন্য আমাদেরকেই এইটা করতে হবে এই রকম মাইন্ডসেট বানায় ফেলতে হবে। কোন নায়ক ভাই আইসা সব গুণ্ডাকে একলা পিটাবে না। সব গুলা হাত এক লগে হয়া ওদের বাংলা মাইর এর প্রেক্টিকেল ক্লাস নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *