৪২/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ১০, ২০১৫ । ১১.৫৬ পি.এম

জয়নুল আবেদিন কে নিয়ে মুগ্ধতা আমার অনেক বেশি। আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আমার সবচেয়ে প্রিয় আর্টিস্ট কে। আমি বলব জয়নুল আবেদিন, তারপর সালভাদর ডালি আর তারপর ভ্যান গগ। আপাতত জয়নুল এ ডুবে আছি। তারপর ওই দুইজন কে নিয়াও লেখার ইচ্ছা রাখি।

আমার মনে হয় তথ্য সুত্র গুলা এইখানে লেইখা রাখা ভাল। আমার জয়নুল আবেদিন কে নিয়া লেখার মূল তথ্য সুত্র আরেকজন প্রিয় শিল্পি হাশেম খান এর একটা বই। নাম “জয়নুল আবেদিন এর সারা জীবন”। প্রকাশিত হইসে সময় প্রকাশনী থেইকা। তারপর এর উৎস বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত “Great Masters of Bangladesh: Zainul Abedin”. এই ২য় বইটা মুলত ছবি দিয়া ভরপুর একটা বই। সাল অনুসারে ভাগ করা, জয়নুল আবেদিন এর সব ছবি দেখা যাবে বইটাতে। দুর্দান্ত বই একটা। তারপর এর তথ্য সুত্র ইণ্টারনেট। সন তারিখ আর নাম গুলা উইকি পেডিয়া থেকে মিলায় নিসি মাঝে মাঝেই।

এইবার লেখায় ফেরত আসি। গত দুই পর্বে লিখসিলাম, জয়নুল এর শৈশব আর কৈশোর নিয়া। এইবার তার কলকাতা আর্ট কলেজে পড়ার সময়কার কথা লেখার চেষ্টা করি।

কলকাতা আর্ট কলেজে জয়নুল আবেদিন এর পড়া লেখা শুরু হয় ১৯৩৩ সালে। সেই সময় একটা মুসলমান ছেলের আর্ট স্কুলে পড়া টা একটা বিশাল ব্যাপার ছিল। সবার একটা ধারনা ছিল, আর্ট, চিত্রকলা এই সব হিন্দুয়ানি ব্যাপার। জয়নুল আবেদিন এর আগে মাত্র একজন মুসলমান ছাত্র পাস করসিলেন আর্ট কলেজ থেইকা। উনার নাম আব্দুল মঈন।

জয়নুল আবেদিন আর্ট কলেজে কিছুদিন এর মধ্যেই “স্টার স্টুডেন্ট” হয়া গেসিলেন। এত ভাল আঁকতেন যে ছাত্র শিক্ষক সবার মধ্যেই তার নাম ছড়ায়া গেসিল। আমার মনে হয় এইটা খুব দরকার। তিনি শুধু নিজের ট্যেলেন্ট নিয়াই পইড়া থাকতেন তা না, অনেক কে ইন্সপায়ার করতেন আর্ট কলেজে পড়ার জন্য। তার দেখা দেখি আরো কয়েকজন মুসলমান ছাত্র কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি হন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শফিকুল আমীন, আনোয়ারুল হক, শফিউদ্দিন আহমেদ, কামরুল হাসান, হবিবর রহমান প্রমুখ। এই নাম গুলা এই জন্যু উল্লেখ করলাম কারন পরে যখন বাংলাদেশ চারুকলা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার গল্প বলব, তখন এই নাম গুলা কিছু কিছু আবার আসবে।

জয়নুল আবেদিন এত প্যাশনেট ছিলেন আঁকা আঁকির ব্যাপারে যে ক্লাস এর পর তিনি কাগজ, তুলি, কলম নিয়ে কলেজের আশে পাশে চইলা যাইতেন। আর কাগজের পর কাগজ ভইরা আইকা নিয়া আসতেন মানুষের ছবি, প্রকৃতির ছবি। তার এই প্যাশন কে অনেক পছন্দ করতেন শিক্ষক রা। সবাইরে বলতেন জয়নুল এর মত হউ। জয়নুল আবেদিন এর শিক্ষক, কলকাতা আর্ট কলেজের বসন্ত গাঙ্গুলি বলেছেন, তার অভিজ্ঞতায় জয়নুল এর মত সেরা ছাত্র আর্ট স্কুলে আর আসে নি।

এখন যেমন ফটোগ্রাফার রা দল বাইন্ধা ফটো ওয়াক, ফটো সাফারি তে যায় সেরকম জয়নুল আবেদিনও একা একা চলে যেতেন বিভিন্ন জায়গায়। তার প্রিয় জায়গা গুলোর মধ্যে ছিল কোল্কাতার বাইরে সাওতাল পরগনার দুমকা আর বাংলাদেশে ময়মনসিংহ এর পাশে ব্রহ্মপুত্র আর ময়ুরাক্ষি নদীর পার ( নদীর নাম টা কি সুন্দর, ময়ুরাক্ষী)।

জয়নুল আবেদিন এর শিক্ষা টা আস্তো ক্লাস রুম থেকে নয়, সরাসরি প্রকৃতি থেইকা আর এই দেশ এর সহজ সরল মানূষ গুলার থেইকা। একটা ঘটনা বলি, একবার তিনি ব্রহ্মপুত্র এর তীরে পানির ছবি আকছেন, এক মাঝি আইসা বলল, “এখান কার পানি আর কি নীল, চলেন আপনাকে দেখাই নীল পানি কারে বলে”। মাঝির সাথে তিনি গেলেন নদীর আরো গভিরে। বিমোহিত হয়ে দেখলেন আকাশ আর নদীর নীল। তিনি যখন ভাবছিলেন এরকম নীল ও কি আঁকা সম্ভব, তখন মাঝি বলল, “কর্তা, আপনার ছবি আঁকার রঙ দিয়া এই নীল হইব না, দোয়াতের কালি ঢাইল্লা দ্যান” । চমকালেন জয়নুল। আসলেই তো। দোয়াতের কালী দিয়েও তো এই নীল আনা যায়। এরকম অনেক টেকনিক উনি উনার আকায় উঠায় নিয়া আসছেন একদম সাধারন মানুষদের কাছে থেকে শুনে।

অনেকেই হয়তো জানেনা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন কিছুদিন কার্টুনিস্ট হিসাবেও কাজ করেছেন। কলকাতা আর্ট কলেজে পড়ার সময় তার বাসা থেকে যে খরচ আসতো, তাতে তার আর্ট সাপ্লাই এর খরচ চালানো কঠিন হয়া যাইতো। তাই তিনি “হানাফি” নামক পত্রিকায় যান কাজ এর জন্য। “হানাফি” এর সম্পাদক ইস্কান্দার গজনবী তাকে “হানাফি”র জন্য কার্টুন আঁকতে বলেন। জয়নুল কার্টুন আকেন তৎকালীন সমাজের অনাচার, রাজনীতি আর সাধারন মানুষের কষ্ট নিয়ে। তার কার্টুন এর নিচে নাম এর বদলে লিখে দিতেন আরবিতে “জিম”। অর্থাৎ জয়নুল।

কলকাতা আর্ট কলেজে জয়নুল আবেদিন এর রিপোর্ট কার্ড দিয়ে আজকের লেখা শেষ করি।

প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষঃ প্রথম স্থান
দ্বিতীয় বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষঃ প্রথম স্থান
তৃতীয় থেকে চতুর্থ বর্ষঃ প্রথম স্থান
চতুর্থ থেকে পঞ্চম বর্ষঃ প্রথম স্থান
পঞ্চম বর্ষঃ প্রথম স্থান এবং “গভরনরস গোল্ড মেডেল” (অল ইন্ডিয়া আর্ট কম্পিটিশন এ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *