৪১/৩৬৫

লেখার তারিখঃ এপ্রিল ৯, ২০১৫ । ১১.৩১ পি.এম

আমি একটা ইউকেলেলে কিনসি আর পাগল হয়া গেসি। রাইত দিন খালি বাজাইতে মুঞ্চায়। আইজকা অপিশ থিকা ৫ টায় বাইর হয়া বাসায় আইশা পরসি। বাসাবো ও যাই নাই। যাতে শুধু ইউকেলেলে বাজাইতে পারি। মাত্র ৫ টা কর্ড শিখসি আর ১ টা গান। লেনারড কোহেন এর হালেলুইয়া। তাতেই এমন আনন্দ হইতাসে। যখন আরো কর্ড আর আরো গান বাজাইতে পারুম তখন কি যে মজা হইবো ভাবতেই তো দম বন্ধ লাগতাসে।

যাউকগা। কালকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এর ছোট বেলা নিয়া লিখসিলাম। আজকে একটু উনার ইস্কুল থিকা আর্ট কলেজ পর্যন্ত গল্পটা লেখার ট্রাই করি।

টুনুর পালায় কোলকাতা চইলা যাওয়ার পর সবাই মোটামুটি বুইঝা ফালাইসিল যে এই ছেলে ছবি আঁকার জন্য পাগল। আর আঁকেও খুব ভাল। তাই সবাই বেশ নিরব সমর্থন জানাইসিল টুনুর এই ছবি আঁকার নেশা কে। এর মধ্যে ইস্কুল এ ঘটলো এক ঘটনা।

টুনুদের চলছিল ইংরেজি ক্লাস। ক্লাস নিচ্ছেন স্কুল এর হেডমাস্টার চিন্তাহরণ মজুমদার। খুব কড়া শিক্ষক। পড়ানোর সময় স্যার খেয়াল করলেন টুনু ক্লাসে মনোযোগ না দিয়া ইংরেজি বই এ ছবি আক্তাসে। ক্লাস এর সময় স্যার কিছু বলেন নাই। কিন্তু ক্লাস এর পরে স্যার টুনু কে ডাইকা বইটা চাইলেন এবং সাথে নিয়া চইলা গেলেন। বইলা গেলেন বই কালকে ফেরত দেওয়া হবে।

টুনুর তো ভয়ে আধমরা অবস্থা। একে তো ক্লাস এ ফাকিবাজী তার উপর স্বয়ং হেডমাস্টার এর কাছে ধরা খাইসে। এইবার তো শিওর স্কুল থেইকা বাইর কইরা দিবে। পরের দিন ক্লাসেই গেল না টুনু ভয়ে। তার পরের দিন ও না। এইভাবে সাত দিন চইলা গেল।

এদিকে হেডমাস্টার চিন্তাহরণ মজুমদার টুনুর ইংরেজি বইটা দেইখা চরম চমকাইলেন। বই এর কবিতা গুলার পাশে টুনু একদম মিলায় মিলায় ছবি আকসে। সেই ছবি দেইখা মুগ্ধ হলেন রাগী এই শিক্ষক। আমাদের আইডিয়াল স্কুল হইলে, ছবি আকস? শিল্পি হবি? হারাম কাজ করস? বইলা পিডায়া ফাডায়া লাইত। কিন্তু আল্লাহ বাচাইসে জয়নুল আবেদিন আইডিয়াল স্কুল এ পড়েন নাই। তাই হেডমাস্টার পরের দিন ই টুনুর খোজ এ গেলেন।

কিন্তু টুনু তো ভয়ে স্কুল এই আসে না। শেষে হেডমাস্টার স্কুল এর পরে টুনুদের বাসায় গেলেন। টুনুর বাবাকে বলে আসলেন “ওকে আঁকতে উৎসাহ দিন। আর্ট স্কুলে ছবি আঁকা শিখতে পারলে ভবিষ্যতে নামী দামী শিল্পী হবে বলে আমি মনে করি।“ কেমন দূরদৃষ্টি ওয়ালা মানুষ ছিলেন সেইটা তো আমরা বুঝতেই পারতাসি এখন।

প্রবেশিকা মানে আমাদের এস এস এসি পরীক্ষার পর টুনু ওরফে জয়নুল আবেদিন কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তির তোর জোর শুরু করেন। কিন্তু কলকাতা শহরে থেকে আর্ট কলেজে পড়ার খরচ চালানোর মত সামরথ তখন জয়নুল এর বাবার ছিল না। জয়নুল রা ছিলেন নয় ভাইবোন। দুই বোন আর আর সাত ভাই। সামান্য পুলিশের চাকুরি করে এত গুলো ছেলে মেয়ের খরচ চালিয়ে সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব ই একটা কাজ ছিল । তার উপর যদি বিদেশে পড়াশুনা যোগ হয় তাহলে একেবারেই সম্ভব ছিল না।

কিন্ত জয়নুল আবেদিন এর মা নিজের গয়না বিক্রি করে দিলেন । ছেলের হাতে তুলে দিলেন আর্ট কলেজে পড়ালেখার খরচ। যা না হলে আমরা হয়তো কিংবদন্তী জয়নুল আবেদিন কে পেতাম না। পরবর্তীতে অনেক সাক্ষাতকার আর বই য়ে জয়নুল আবেদিন এই ঘটনা বলে উনার মা এর এই সেক্রিফাইস এর কথা মনে করেছেন।

জয়নুল আবেদিন কে নিয়া যখন বই গুলা পড়তেসিলাম, একটা কথাই মনে হইতেসিল বার বার। আমাদের স্কুল গুলো তে না জানি আমরা কত জয়নুল, কামরুল, সত্যজিৎ মাইরা ফেলতেসি প্রতিদিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *